photo

রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

মুক্তাগাছা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইয়াকুব আলী আর নেই


স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তাগাছা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মৌলভী ইয়াকুব আলী (১০০) গতকাল রবিবার বিকালে নিজ বাসভবন শহরন্থ কালিবাড়ি পুকুরপাড় (২৩ ফেব্রৃয়ারী )বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন । (ইন্না ... রাজেউন) । মৃত্যুকালে তিনি ৩ পুত্র ,২কণ্যা, নাতি নাতনীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন ।মুক্তিযুদ্ধকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ তথা সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের দায়িত্ব পালন ও আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু প্রেমে নিমজ্জিত থাকলেও মুক্তাগাছার মৌলভী ইয়াকুব আলীর ভাগ্যে মুক্তিযোদ্ধা বা সংগঠক হিসেবে কোন স্বীকৃতি মিলেনি। লজ্জা, ঘৃণা আর বুকভরা হতাশা নিয়ে রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি ছাড়াই রোববার চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলেন ১০০ বছর বয়সী প্রবীণ নিরহঙ্কারী এ রাজনীতিক। গত সোমবার সকালে নানা শ্রেণী-পেশার অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক গোরস্তানে তার লাশ দাফন করা হয়। জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মৌলভী ইয়াকুব আলী শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে মুক্তাগাছায় আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন। ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি '৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলকে সংগঠিত করার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকজন সংগ্রহ করে মুক্তিযুদ্ধে পাঠান। স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করান। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসংখ্য তরুণ, যুবক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান। শুধু অন্য লোকজনই নয় নিজের কলেজ পড়ুয়া বড় ছেলেকেও দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধে পাঠান। ছেলে আবদুর রাজ্জাক মুজিব বাহিনীর টিম লিডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। স্থানীয় দালাল রাজাকার ও দখলদার পাকবাহিনী কর্র্তৃক তার বাড়ি ঘর আক্তান্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জাতীয় পরিষদ সদস্য সৈয়দ সুলতান, গণপরিষদ সদস্য খোন্দকার আবদুল মালেক শহিদুল্লাহ, রফিক উদ্দিন ভুইয়াসহ আলোচিত নেতাদের পাশে থেকে মুক্তিযুদ্ধ, দেশ ও দলের জন্য অসাধারণ ভূমিকা পালন করেন মৌলভী ইয়াকুব আলী। বহুবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচার্য লাভ করেন। স্বাধীনতার পর দলের দুঃসময়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে সরকারি কোন সনদ তিনি পাননি। তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক খোন্দকার আবদুল মালেক শহিদুল্লাহ বলেন, তার মতো একজন প্রকৃত সংগঠক ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিকের মুক্তিযোদ্ধার সনদ না পাওয়াটা শুধু দুর্ভাগ্যই নয় জাতির জন্য লজ্জাজনকও। মৃত্যুর পর হলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় তিনি সরকারের কাছে সে দাবি জানান। মুক্তাগাছা পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আকন্দ বলেন, তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার পক্ষ শক্তির এসেট। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিস আলী আকন্দসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা তার নাম গেজেটভুক্ত করে তার নামে সনদ প্রদান করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। মরহুম ইয়াকুব আলীর ছোট ছেলে মুশফিকুর রহমান মশিউর জানান মৃত্যুর আগে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জামুকাসহ বিভিন্ন বিভাগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে নতুন করে আবেদন করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেতে খুব ইচ্ছা পোষণ করে গেছেন। সেটা না হওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন মৃত্যুর পর হলেও তার বাবার নাম গেজেটভুক্ত হলে সন্তান হিসেবে তারা অন্তত সান্ত্বনাটুকু পাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন