photo

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩

খাদ্যগুদামে দুর্নীতি

পহেলা জানুয়ারি থেকে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ধান, চাল, গম, সার ও চিনি বাজারজাতকরণ স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে ধান, চাল, গম, সার ও চিনি বাজারজাত করতে বাধ্যতামূলকভাবে পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। সরকারী ও বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানকেই এসব পণ্য সরবরাহে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক। পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারীভাবে ধান, চাল ও গম বাজারজাত করার ক্ষেত্রে খাদ্য অধিদফতর এখন শুধুই পাটের বস্তা ব্যবহার করে। কিন্তু আইন থাকার পরও বেসরকারী চালকল, চাতালমিল ও দোকানদাররা তা মানেন না। সে কারণেই ধান, গম ও চালের মোড়কীকরণে পাটের বস্তা ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তে খুশি দেশের বিভিন্ন স্থানের পাটকলের মালিকরা। প্লাস্টিকের ব্যাগে খাদ্যশস্য মোড়কজাতকরণ ও পরিবহন হওয়ায় পাটকল মালিকরা ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসছেন। তবে তাঁরা এখন মনে করছেন সরকারের এ সিদ্ধান্তে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা ছোট পাটকলগুলো আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। চলতি বছর সেপ্টেম্বর এই আইনের সংশোধনী আনা হয়। সংশোধিত আইনে কোন ব্যক্তি এ আইনের বিধি দ্বারা নির্ধারিত পণ্য পাটজাত মোড়ক ব্যতীত বিক্রি বা বিতরণ করতে পারবেন না। এই আইন লঙ্ঘনে শাস্তি ও জরিমানার বিধানও রাখা হয়েছে। জানা গেছে, পাটকলগুলোতে এখন দুই ধরনের পাটের বস্তা তৈরি হচ্ছে। যে পাটের বস্তা রফতানি হয় তার উৎপাদন খরচ পড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর দেশীয় চাহিদা মেটাতে তৈরি হওয়া পাটের বস্তার উৎপাদন ব্যয় পড়ে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। অন্যদিকে একই ওজন বহনে সক্ষম প্লাস্টিকের একটি ব্যাগ বাজারে কিনতে পাওয়া যায় মাত্র ১৫ টাকায়। সে কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে প্লাস্টিকের বস্তা বেশ জনপ্রিয়। ফলে তাঁরা এতদিন পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইনেরও তোয়াক্কা করতেন না। তবে পাট মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে আগামী পহেলা জানুয়ারি থেকে ধান, চাল ও গমে পাটের বস্তা ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন (বিজেএমসি) এবং বাংলাদেশ জুট মিলস এ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন পাটের বস্তার উৎপাদন হয় বছরে ৫০ থেকে ৬০ কোটি। এর মধ্যে বিজেএমসির উৎপাদন বছরে ৩৮ কোটি বস্তা। বিজেএমসির হিসাবে খাদ্যশস্য, সার ও চিনি মোড়কীকরণ করতে বছরে ৫০ থেকে ৫৫ কোটি পাটের বস্তার প্রয়োজন হবে।কালাইয়ে ধান বিক্রি করে লোকসানে কৃষক চাতাল মালিকদের পোয়াবারো কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি প্রকাশ : ০৬ জুন, ২০১৩ জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার প্রান্তিক কৃষকদের ধান খাদ্যগুদামে নেয়া হয় না। ফলে তাদের উৎপাদিত ধান চাতাল মালিকদের কাছে বিক্রি করতে হয়। এতে কৃষকদের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়। ধান বিক্রি করে কৃষকরা লোকসান গুনলেও তাদের কাছ থেকে কম দামে সেই ধান কিনে অল্প দিনেই মোটা অংকের মুনাফা লাভ করেন মিলাররা। চলতি বোরো মৌসুমে মিলাররা কৃষকদের কেনা ধান থেকে চাল তৈরি করে সরকারি গুদামে সরবরাহ করে অন্তত সাত কোটি টাকা মুনাফা লুটবেন। আর লোকসান গুনতে হবে প্রান্তিক কৃষকদের। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার থেকে চালকল মালিকরা মোটা জাতের বোরো ধান প্রতিমণ সর্বোচ্চ ৪৮০ থেকে ৫৪০ টাকা এবং সরু জাতের ধান সর্বোচ্চ ৪৫০-৫১০ টাকা দরে কেনাকাটা করেছেন উপজেলা খাদ্য বিভাগ, চালকল মালিক ও ভুক্তভোগী কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কালাই উপজেলায় দুটি অটো হাস্কিং রাইসমিলসহ মোট ২০৭টি লাইসেন্সধারী চালকল রয়েছে। সরকারি খাদ্য গুদামের জন্য চলতি মাসে এসব চালকল মালিকরা ৭ হাজার ৭৪৯ মেট্রিক টন সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছেন। এর মধ্যেই চালকল মালিকরা খাদ্যবিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধও হয়েছেন। এবার সরকারিভাবে চালের দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে প্রতিকেজিতে ২৯ টাকা। ধানের দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে প্রতিকেজি ১৮ দশমিক ৫০ পয়সাা। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে কালাই উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার থেকে চালকল মালিকরা মোটা জাতের বোরো ধান প্রতিমণ সর্বোচ্চ ৪৮০ থেকে ৫৪০ টাকা এবং সরু জাতের ধান সর্বোচ্চ ৪৫০-৫১০ টাকা দরে কেনাকাটা করেছেন। বুধবারও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতিমণ ধান সর্বোচ্চ ৫৪০ টাকা দরে কেনাবেচা হয়েছে। ওই দরে ধান কিনে চালকল মালিকরা লাভবান হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীদের গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের লোকসান। কৃষকদের অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে খাদ্যগুদামে সরাসরি ধান কেনা হয় না। দেখান হয় নানা অজুহাত। ফলে চাতাল মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। তাই ধারদেনা করে ফলানো ফসল পাওনাদারদের চাপের মুখে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। কালাই উপজেলা ধানচাল সংগ্রহ কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেনÑ সরকার ধানের যে দর বেঁধে দিয়েছেন, সে দামে ধান বিক্রি করতে পারলে তারা লাভবান হবেন। কিন্তু কালাই উপজেলার হাট-বাজারগুলোতে বর্তমান যে দরে ধান কেনাবেচা হচ্ছে তা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। - 30-09-2013 09:00:17 ধান চাল সংগ্রহে ‘ঘুষ’ শফিকুল ইসলাম জুয়েল : ‘সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়গুলোয় ‘ঘুষ’ নেয়া-দেয়া রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। শুধু খুলনা অঞ্চলেই প্রতিকেজি চাল সংগ্রহে এর পরিমাণ ৭৫ পয়সা থেকে শুরু করে ২ টাকা পর্যন্ত। স্থানভেদে তা ৩ টাকাও হয়েছে। শুধু খুলনা অঞ্চল থেকেই ১০ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহে প্রায় দেড় কোটি টাকা ‘ঘুষ’ তুলেছেন খুলনা জেলা খাদ্য পরিদর্শক ও খাদ্য নিয়ন্ত্রক।’ ঘুষ গ্রহণের ‘চিরায়িত সত্য’ এ তথ্যটি এবার ফাঁস করেছে খোদ খাদ্য অধিদফতরই। খাদ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. এনায়েত হুসাইন তার ১১ পৃষ্ঠার সরেজমিন প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে করা এ প্রতিবেদনটিকে ‘অতি গোপনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করে সম্প্রতি তা খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বর্তমানকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে ঘুষের সত্যতা পাওয়ায় এরই মধ্যে খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুধাংশু হাওলাদারকে বদলি করা হয়েছে। এখন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরবর্তী বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’ ওই কর্মকর্তা আরও জানান, শুধু এ সরকারের আমলেই নয়, বিগত সরকারগুলোর সময়েও ঘুষের ধারা অব্যাহত ছিল। তবে দিন দিন এ খাতে অবৈধ অর্থের লেনদেন বেড়েই চলছে। খাদ্য অধিদফতরের এ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সরকার ঘোষিত চাল সংগ্রহে ঘুষ নেয়ার রেওয়াজ পুরনো। আর এ প্রথা শুধু খুলনায়ই নয়, সারাদেশেই। গত বছরেও ঘুষের পরিমাণ কেজিপ্রতি ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা বেড়েছে। আর এই উচ্চহারের ঘুষের বিনিময়েও চাল সরবরাহে আগ্রহের ঘাটতি হয়নি চালকল মালিকদের। বরং বরাদ্দপত্র সংগ্রহে তারা প্রতিযোগিতা করেছেন। কারণ, ঘুষ দেয়া হলেই নিম্নমানের চাল সরবরাহে সুবিধা হয়, যা দেখেও না দেখার ভান করেন খাদ্য বিভাগের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ঘুষের টাকার জোগান দেয়া হয় কৃষককে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে। সরেজমিন প্রতিবেদনের সূত্র ধরে চাল সরবরাহে এগিয়ে থাকা জেলা হিসেবে খ্যাত নওগাঁ ও কুমিল্লার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এর সত্যতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। এ দুই এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে টেলিফোনে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক বর্তমানকে বলেন, তাদের এলাকায় প্রতিকেজি চাল সরবরাহে ঘুষের পরিমাণ ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। যেসব চালকল মালিক টাকা দেন না, তারা চাল সরবরাহের কাজও পান না। তবে অধিকাংশ চালকল মালিক স্থানীয় এসব কর্মকর্তার চাহিদার বিপক্ষে অবস্থান নেন না। বরং ঘুষ দিয়ে ‘অতিরিক্ত’ চাহিদাপত্র হাতান। কারণ, ঘুষ দিলে লোকসানের চেয়ে লাভই বেশি। এতে করে নিম্নমানের চাল অনায়াসেই সরবরাহ করা যায়। অন্যদিকে ঘুষের টাকাও ব্যবসায়ীদের ঘর থেকে যায় না। কৃষককে ধানের দাম কম দিয়েই মেলানো হয় এ টাকার জোগান। এ ছাড়া গুদামে জায়গা নেই, আজ চাল নেয়া যাবে না, চালের মধ্যে মরা আছেসহ নানা অভিযোগ উল্লেখ করে ঘুষ নেয়া খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এসব ব্যবসায়ী বলেন, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান মানেই ঘুষের কারবার। আর এটা সব সরকারের আমলেই প্রায় সব কর্মকর্তাই করেন। খাদ্য অধিদফতরের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঘুষ আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে সংগ্রহ নীতিমালা উপেক্ষা করে অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। সরকারি চাহিদার পুরোটাই একই সঙ্গে বরাদ্দপত্র আকারে দেয়ার নিয়ম থাকলেও খুলনা মহানগরী, রূপসা ও ফুলতলা উপজেলায় বরাদ্দের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। শুধু রূপসা উপজেলায় ১ হাজার ৮৭৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের ক্ষেত্রে ২২টি চালকলের বিপরীতে তিন দফায় বরাদ্দপত্র দেয়া হয়েছে। বিনিময়ে প্রথম দফায় কেজিপ্রতি ৭৫ পয়সা, দ্বিতীয় দফায় ১ টাকা এবং তৃতীয় দফায় ২ টাকা হারে ঘুষ আদায় করা হয়েছে। আর ঘুষের টাকা আদায় করতেও দেয়া হয়েছে ‘অতিরিক্ত বরাদ্দপত্র ঘুষ’। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে রূপসা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলীকে। এই সভাপতি ও তার ভাইয়ের মালিকাধীন দুটি চালকলের বিপরীতে (মের্সাস শাপলা ও পূবালী রাইস মিল) অতিরিক্ত ৫০ মেট্রিক টন করে ১০০ মেট্রিক টন চালের বরাদ্দপত্র দিয়ে তার মাধ্যমে অন্য চালকল মালিকদের কাছ থেকে ঘুষের টাকা তুলে নেয়া হয়েছে, যাকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের চালকল ব্যবসায়ীরা ‘চরম বিশ্বাসঘাতকতা ও হীন কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন। ঘুষের টাকা ওঠাতে প্রায় একই ধরনের কৌশল ছিল অন্য জেলা-উপজেলাতেও। প্রতিবেদনে ‘ঘুষ’ আদায়ের সত্যতা তুলে ধরে বলা হয়- চালের বরাদ্দপত্র নিয়ে ঘুষ দেয়া-নেয়ার বিষয়টি চালকল মালিক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস, সংশ্লিষ্ট সকল খাদ্য দফতর, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতর ও খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ‘ওপেন সিক্রেট’। খুলনা মহানগরী, রূপসা ও ফুলতলা উপজেলার ২৪ চালকল মালিক তাদের বক্তব্যে সরাসরি ঘুষ বিনিময়ে বরাদ্দপত্র পেয়েছেন বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আর চালের বরাদ্দপত্র পেতে ‘ঘুষ অপরিহার্য’ বলেই মেনে আসছেন তারা। ঘুষ দেয়া-নেয়ার কথা স্বীকার করে বক্তব্য দিয়েছেন খুলনা মহানগরীর ৫, ফুলতলা উপজেলার ৬ এবং রূপসা উপজেলার ১৩ চালকল মালিক। তারা হলেন দামোদার ফুলতলা বাজারের তিনতারা রাইস মিল-১ ও ২-এর স্বত্ব্বাধিকারী ও ফুলতলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি কিউএবি এহছানুল হক, ফুলতলা রাইস মিলের মালিক রফিউদ্দিন মোল্লা, লবণচরা রাইস মিলের মালিক ও মহানগর রাইস মিল সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামাল, কামাল রাইস মিলের মালিক এবং জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, রূপসার নীপা রাইস মিলের মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন, লবণচরার হক রাইস মিলের মালিক আনোয়ার হোসেন, লবণচরার এফ রহমান রাইস মিলের মালিক মো. মহসীন, রূপসা নন্দনপুরের কাজী রাইস মিলের মালিক স্বপন নন্দী, রূপসার শাপলা রাইস মিলের মালিক শেখ মোহাম্মদ আলী, রূপসার নিকলাপুর ক্রিসেন্ট রাইস মিলের মালিক পবন কুমার সাহা, রূপসার নিকলাপুর পপুলার রাইস মিলের মালিক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, রূপসা মিল্কিদিয়ারার বাংলা রাইস মিলের মালিক আবদুুল আজিজ, রূপসা মিল্কিদিয়ারার এলআরএস রাইস মিলের মালিক গোপাল সাহা, রূপসা নন্দনপুরের পূবালী রাইস মিলের মালিক দিলীপ কুমার দাস, খুলনা লবণচরার কর্ণফুলী রাইস মিলের মালিক কাজী আবদুুল জব্বার, ফুলতলার হোসেন রাইস মিলের মালিক শাহাদত মোড়ল, ফুলতলার জোবেনা রাইস মিলের মালিক সরদার মাহবুবুর রহমান, ফুলতলার হীরা রাইস মিলের মালিক মহসীন গাজী, ফুলতলার গাজী রাইস মিলের মালিক আবদুুস সামাদ গাজী, রূপসার নিকলাপুর মেসার্স শরীফ রাইস মিলের মালিক শেখ আবু জাফর, রূপসা বেলফুলিয়ার নন্দনপুর রাইস মিলের ব্যবস্থাপক আবদুুল জব্বার শেখ, রূপসা বেলফুলিয়ার আইচাগাতি রাইস মিল-২-এর মালিক জিয়াউল হক, রূপসা আইচাগাতির মধুমতি রাইস মিলের মালিক শেখ আসাদুজ্জামান ও রূপসার পূবালী রাইস মিল নন্দনপুরের মালিক শেখ আব্দুল ওয়াহিদ। এদের মধ্যে দামোদার ফুলতলা বাজারের তিনতারা রাইসমিল-১ ও ২-এর স্বত্বাধিকারী এবং ফুলতলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি কিউএবি এহছানুল হক প্রতিবেদন তৈরিকারী কর্মকর্তাকে জানান, ২০১২ সালের বোরো মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা ঘোষণার পর পরই খুলনা জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি জেলার সব চালকল মালিককে নিয়ে খুলনা মহানগরীতে সভা আহ্বান করেন। সভায় আলোচনার পর প্রতিকেজি চাল বরাদ্দের বিপরীতে খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরে ৭৫ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। আর অন্যান্য বছর ঘুষের হার কম থাকলেও এবার বেশি কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন— ‘এ বছর বাজারদরের চেয়ে সরকারের সংগ্রহ মূল্যের তারতম্য অনেক বেশি। আর সে কারণে ‘ঘুষ নির্ধারণে’র হারও বেড়েছে।’ চালের বরাদ্দপত্র দিয়ে ঘুষ নেয়ার ‘যথার্থ’ প্রমাণ হিসেবে প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়— খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরে চালকলের ছাঁটাই ক্ষমতাসংবলিত কোনো রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না। ইচ্ছামতো চালকল মালিকদের চাহিদাপত্র দেয়া হয়। ঘুষের অঙ্কে তারতম্য ঘটলে চালকলের ছাঁটাই ক্ষমতাও কমবেশি করা হয়। যেমন রূপসা উপজেলার নীপা রাইস মিলকে ৫৪ মেট্রিক টন চাল সরবরাহের জন্য বরাদ্দপত্র দেয়া হয়। অথচ এরই পাশে অবস্থিত আইচগাতি রাইস মিল-২কে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৯ মেট্রিক টন চাল। অথচ নীপা রাইস মিলের চেয়ে আইচগাতি রাইস মিল-২-এর চাতালের আয়তন, অবস্থান, মসৃণতা এবং পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা অন্তত ৫ গুণ বেশি। প্রায় একই ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে অন্য জেলা-উপজেলার বরাদ্দপত্র বিতরণেও। প্রতিবেদনে বলা হয়, সরেজমিনে ফুলতলা এলএসডির (খাদ্যগুদাম) ১১, ১৩, ১৪ ও ১৬ নন্বর খামালে সংরক্ষিত চালের নমুনা যাচাই করে বিনির্দেশে বর্ণিত মাত্রার অনেকগুণ বেশি ভাঙা, মরা ও বিবর্ণ দানার চাল পাওয়া যায়। রূপসা উপজেলার আলাইপুর এলএসডিতেও ফুলতলার মতো প্রায় একই ধরনের নিম্নমানের চাল পাওয়া গেছে। আলাইপুর এলএসডির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল আনোয়ার প্রতিবেদন তৈরিকারীর কাছে স্বীকার করেছেন— অবৈধ সুবিধা নেয়া মেসার্স নীপা রাইস মিল ও মেসার্স ক্রিসেন্ট রাইস মিল নিম্নমানের এসব চাল সরবরাহ করেছে। আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মূখে নিম্নমানের এসব চাল গুদামে ভরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদন তৈরিকারীকে ঘুষের তথ্য দিলে ‘ভীষণ ক্ষতি’ হবে বলে চালকল মালিকদের প্রথমে অনুরোধ এবং পরে শাসিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দফতরের কর্মকর্তারা। তারা হুমকি দিয়ে বলেছেন, ঘুষের তথ্য দেয়া হলে ভবিষ্যতে জেলায় রাইস মিলের ব্যবসা বন্ধসহ সরকারি সব ধরনের বরাদ্দ থেকেও বঞ্চিত করা হবে। পরে হুমকির বিষয়টি মিল মালিকদের অনেকেই ‘মিলের নাম গোপন রাখার শর্তে’ প্রতিবেদন তৈরিকারীকে জানিয়েছেন। প্রতিবেদনের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, খুলনা জেলায় ধান-চাল সংগ্রহে কেজিপ্রতি ৭৫ পয়সা থেকে শুরু করে ২ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে জেলা-উপজেলার সভাপতি-সেক্রেটারিদের। বিনিময়ে উেকাচ হিসেবে তাদেরকেও দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত বরাদ্দ। আর সরকারি চাহিদার পুরোটা একই সঙ্গে বরাদ্দের নিয়ম থাকলেও এর বিপরীতে ৩ দফায় বরাদ্দ দেয়ায় স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম-দুর্নীতি স্পষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে অধিক ছাঁটাই ক্ষমতাসম্পন্ন চালকলের ওপর ইনজাস্টিস করা হয়েছে। দুর্নীতির সুবিধার্থে চালকলের ছাঁটাই ক্ষমতাকে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ঘুষবাণিজ্যের কারণে চালের মান বিনির্দেশ মোতাবেক না হয়ে ভাঙা, খুদযুক্ত ও নিম্নমানের হয়েছে। অবৈধ লাভের বশবর্তী হয়ে যা (চাল) নির্দ্বিধায় গুদামে পুরেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মিল মালিকরা তথ্য দিতে এলে তাদের সহযোগিতার বিপরীতে হুমকি প্রদানে খাদ্য বিভাগের দুর্নীতি আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিবেদনের মন্তব্যে বলা হয়েছে, মিল মালিকদের বক্তব্য ও সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহে ‘অবৈধ ঘুষ’ লেনদেনের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। ঘুষের বিষয়টি পূর্ব থেকে চলে আসায় এখন রেওয়াজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। স্থানীয় চালকল মালিকদের সহযোগিতায় অবৈধ সুবিধা নিয়ে আসছেন খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তবে ঘুষবাণিজ্যে অগ্রণী ভূমিকায় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শুধাংশু হাওলাদার ও খুলনা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ দফতরে ডেপুটিশনে কর্মরত খাদ্য পরিদর্শক মো. তৈয়েবুর রহমান। এ ছাড়া তাদের এসব অনিয়ম প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করে দুর্নীতি করেছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও গুদাম রক্ষকরা। প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় এবং কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে রেওয়াজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া ‘ঘুষবাণিজ্য’ দ্রুত বন্ধ করা দরকার। সেই সঙ্গে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তদন্ত পদ্ধতি সম্পর্কে প্রতিবেদনটিতে খাদ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত এ মহাপরিচালক মো. এনায়েত হুসাইন উল্লেখ করেন, সারাদেশ থেকে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে খুলনা বিভাগীয় অঞ্চলকে তদন্ত ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেয়া হয়। এক্ষেত্রে তিনটি স্থানকে (খুলনা মহানগরী, ফুলতলা ও রূপসা উপজেলা) চিহ্নিত করে তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্তের সময় সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় এলাকা ও খাদ্যগুদামগুলো। কথা বলা হয় চালকল, চাতাল মালিক এবং তাদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিতদের সঙ্গে। পর্যালোচনা করা হয় জেলা ধান-চাল সংগ্রহ কমিটি ও উপজেলা সংগ্রহ কমিটির সভার কার্যবিবরণী। যাচাই করা হয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরের রেজিস্টার ও নথিপত্র থেকে চালকলগুলোর ছাঁটাই ক্ষমতা নির্ধারণ পদ্ধতি ও তালিকা, বরাদ্দ তালিকা, চুক্তিপত্রসমূহ। এ ছাড়া যাচাই করা হয় খুলনা সিএসডি এবং ফুলতলা ও রূপসা এলএসডির খাদ্যগুদামে জমাকৃত চালের মান। - See সরাইলে ধান-চাল সংগ্রহে দুর্নীতির অভিযোগ : কৃষকদের কাছ থেকে একমুঠো ধানও কেনা হয়নি ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ৫ অক্টোবর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় সরকারীভাবে ধান এবং চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার খাদ্য ও গুদাম কর্মকর্তারা চলতি মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে একমুঠো ধানও তারা সংগ্রহ করেনি। খাদ্য কর্মকর্তারা এখন ধানের পরিবর্তে চাতাল কল থেকে আতপ চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা চাতালকল মালিকদের কাছ থেকে টন প্রতি ১ হাজার টাকা কমিশন পেয়ে শুধু চাল সংগ্রহ করেই চলতি মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সরকারি এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এলাকার কৃষকদের স্বার্থে ধান কেনার তাগিদ দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সরকারদলীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা উপজেলা খাদ্য ও গুদাম কর্মকর্তাদের সাথে একাধিবার কথা বলেছেন। কিন্তু ওই দুই কর্মকর্তা ধানের পরিবর্তে চাতাল কল থেকে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। উপজেলার কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, এখানকার গুদাম কর্মকর্তা নিজেকে পররাস্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দিপু মনির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মনগড়াভাবে গুদামের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। লোকজন কৃষকদের স্বার্থে তাকে কিছু বলতে গেলেই তিনি মন্ত্রীর ভয় দেখান। উপজেলার কালীকচ্ছ এলাকার কৃষক মো. শওকত মিয়া, আবু ছায়েদ, বাচ্চু মিয়া, ইউসুফ আলী, আলী মিয়া এবং নোয়াগাঁও এলাকার কৃষক ছোটন মিয়া, হেলিম মিয়া, সিরাজ মিয়াসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক কৃষক অভিযোগ করে জানান, সরকারী মূল্য পেতে তাদের উৎপাদিত ধান ভাল ভাবে শুকিয়ে তারা এ ধান বিক্রির করতে খাদ্য গুদামে গিয়েছিল। কিন্তু গুদামের লোকেরা কৃষকদের ফিরিয়ে দেন। গুদাম থেকে কৃষকদের জানিয়ে দেয়া হয় তারা ধান কিনবে না। পরে অসহায় কৃষকরা কম মূল্যে চাতালকল মালিকদের কাছে এ ধান বিক্রি করে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এই উপজেলা থেকে ৩ হাজার ২শত ২৯.২০ মেট্রিক টন বোরো সিদ্ধ চাল এবং ৪শত ৪৭ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করতে সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। প্রতি মণ ধান ৭২০ টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করার নির্দেশও দেয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তারা সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলার ৫০টি চাতাল কল থেকে টন প্রতি হাজার টাকা কমিশন পেয়ে চাল ক্রয় করেন। কৃষকদের কাছ থেকে তারা একমুঠো ধানও ক্রয় করেননি। এখন খাদ্য বিভাগের লোকেরা নতুন করে ধানের পরিবর্তে চাতাল কল থেকে ৮শত ৫০ মেট্রিক টন আতপ চাল ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় এলাকার কৃষকদের সুবিধার্থে ধান ক্রয়ের পর আতপ চাল ক্রয় করার দাবি জানানো হয়েছে। এদিকে উপজেলার অনেক চাতাল কল মালিকের দাবি তারা টন প্রতি ১ হাজার টাকা কমিশন দিয়েই গুদামে চাল বিক্রি করতে হয়েছে। এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদ উদ্দিন ভূঁইয়া চলতি মৌসুমে ধান না নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, কৃষক ধান দিতে আসে না। এছাড়া ধান সংগ্রহে ঝামেলাও অনেক। তাই ধান নেওয়া হয়নি। চাল ক্রয়ে কমিশন নেওয়া এবং মন্ত্রীর পরিচয়ে প্রভাব খাটানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়গুলো এড়িয়ে যান। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গুদামে জায়গার অভাবে ধান নেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন ৮শত ৫০ মেট্টিক টন আতপ চাল ক্রয় করবো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে নির্দেশনা দেয়া আছে। গুদামে জায়গা না থাকলে, জায়গার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু ধান নেবে না কেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে নাসিরনগর ও কসবা উপজেলায় কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির উপদেষ্টা হাজী রফিক উদ্দিন ঠাকুর খাদ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, গুদামে ধান রাখার জায়গা না থাকলে ৮শত ৫০ টন আতপ চাল কোথায় রাখবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দু’জনে মিলে অজানা কারণে তারা এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করছে না। ধানের পরিবর্তে তারা এখন আতপ চাল ক্রয় করার পরিকল্পনা করেছে। তিনি আরো বলেন, শুনেছি গুদাম কর্মকর্তা নিজেকে পররাস্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দিপু মনির নিকট আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এখানে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। Sat, 20 Jul, 2013 10:33 PM গুদামে ধান-চাল সংগ্রহে অনিয়ম জেলা প্রতিনিধি, বাংলামেইল২৪ডটকম বেনাপোল(যশোর): শার্শা উপজেলার নাভারণ খাদ্যগুদামে বোরো ধান ও চাল ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা খাদ্য গোডাউনের কর্মকর্তা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা উৎকোচ নিয়ে নিম্নমানের খাদ্যসংগ্রহ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি খাদ্য সংগ্রহের নীতিমালা অনুসারে কৃষক ও মিলারদের কাছ থেকে ধান, চাল ক্রয় করা হলেও সে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উৎকোচ আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা। বোরো সংগ্রহ নিয়ে প্রতি টন খাদ্য সংগ্রহ বাবদ দুই হাজার টাকা উৎকোচ নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো সংগ্রহ মৌসুমে শার্শা নাভারণের খাদ্য গুদামে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ৯শ ৭০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহে করা হয়েছে। এর মধ্যে শার্শা উপজেলায় ৪শ’ ৩৫ মেট্রিক টন ধান ও ৩ হাজার ৯৩ মেট্রিক টন চাল উপজেলার ৫৫ জন মিলারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হবে। তবে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছেনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মিলার বলেন, অনেক কষ্ট করে ধান মাড়াই করে চাল করি। পরে খাদ্য কর্মকর্তার কাছে গেলে বলে এ চাল ভাল না। তবে পিছনে ডেকে ২ হাজার টাকা দিলে সব চাল ভাল হয়ে যায়। অভিযোগ অস্বীকার করে এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা খাদ্য গোড়াউনের কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, যে আমার নামে অভিযোগ করেছে তাকে সামনে আনতে হবে। অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। সরাইলে ধান-চাল সংগ্রহে চরম অনিয়ম Posted on June 26, 2013 by admin আরিফুল ইসলাম সুমন ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ধান-চাল সংগ্রহে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এখানে সরকারদলীয় নেতাদের তদবির ও অসাধু মিল মালিকদের সাথে রফাদফায় কোন প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই নি¤œমানের কাকঁড় মিশ্রিত দুর্গন্ধযুক্ত চাল গুদামে ঢুকানো হচ্ছে। ফলে চাল সংগ্রহের নামে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি কতিপয় নেতা ও গুদাম কর্মকর্তাদের পকেট ভারী হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। গত রবিবার চাল সংগ্রহে অনিয়মের খবরে সরেজমিন স্থানীয় খাদ্য গুদামে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। গুদামে খাদ্যশস্য উঠানামার কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এখানে সংগ্রহ করা প্রায় চাল ভাঙা, লাল রংয়ের ও কাকঁড় মিশ্রিত। এসব চালে রয়েছে দুর্গন্ধ। নি¤œমানের এসব চালের বস্তাগুলো গুদামে বিশেষ কায়দায় মোটামুটি ভালো এমন চালের বস্তার আড়ালে রাখা হয়। যা সহজে বের করা সম্ভব নয়। রবিবার গুদামে চাল নিয়ে আসা মেসার্স প্রগতি রাইছ মিলের প্রতিনিধি মোঃ উবায়দুল মিয়া বলেন, আমাদের কিছু বস্তা চাল গুদাম কর্মকর্তা গ্রহণ করেন। বাকি বেশকিছু বস্তা চাল ফেরত দিচ্ছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা যে মানের চাল নিয়ে এসেছি তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী খারাপ মানের চাল এই গুদামে ঢুকানো হয়েছে। এক্ষেত্রে গুদাম কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট মিল মালিকদের কাছ থেকে টনপ্রতি কমিশনের টাকা নিয়েছেন। সরাইল উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ভূইঁয়া বলেন, তারা যে মানের চাল গুদামে নিয়ে এসেছে তা গ্রহণের উপযোগী নয়। তারপরও বিশেষ ব্যক্তিদের তদবিরে তাদের কিছু বস্তা চাল গুদামে ঢুকানো হয়েছে। বাকি বস্তাগুলোর চাল একেবারে নি¤œমানের। তিনি বলেন, এখানে গত ২৩ মে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। চার হাজার ৭৩ মেট্টিক টন সিদ্ধ চালের বিপরীতে সোমবার পর্যন্ত মাত্র ৬শ’ ৭৩ টন, ২৯৭ টন আতপ চলের মধ্যে ২০৩ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। ধান ৪৬৩ টনের বিপরীতে একমোটও সংগ্রহ হয়নি। তিনি দাবি করেন, সরকারি ধরের চেয়ে বাজার ধর বেশী হওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান নিয়ে আসছে না। তাছাড়া বাজারে চালের মূল্যও বেশী। মিলাররা সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি চাল ২৯ টাকা ধরে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করছে। সরাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে ধান-চাল সংগ্রহে সকল নিয়মনীতি মানা হচ্ছে। অনিয়মের বিষয়টি সঠিক নয়। তিনি বলেন, ধান ও চাল সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এখানে বাজার ধর বেশি হওয়ায় সংগ্রহ কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। চাল সংগ্রহে নেতাদের তদবির রক্ষা করলেও পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া গুদামে কোন চাল ঢুকানো হয় না বলে তিনি করেন।নাটোরের খাদ্যগুদামে পচা চাল নেয়ার অভিযোগ নাটোর প্রতিনিধি প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ নাটোরে সরকারি খাদ্যগুদামে খাওয়ার অযোগ্য পচা চাল সংগ্রহ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি ইরি বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে ২৯ টাকা কেজি দরে জেলার ছয় উপজেলা থেকে মোট ২৫ হাজার ১শ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ২৮ টাকা কেজি দরে ৪৫৯ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। একই সময় ১৮ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে ২ হাজার ২শ ৭৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। জেলার মোট ৬শ ১৫ জন চুক্তিবদ্ধ মিলারের কাছ থেকে এসব চাল সংগ্রহের চুক্তি থাকায় মিলাররা নির্ধারিত দামে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে শুরু করেন। প্রথমদিকে বাজার দর কম থাকায় মিলাররা ঠিকমতোই খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করেছেন। বাজারে চালের দাম বেড়ে ৩২ টাকা কেজি হওয়ায় এখন মিলাররা খাওয়ার অযোগ্য পচা চাল মিশিয়ে গুদামে সরবরাহ করছেন। চাল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, পচা এসব চাল সরবরাহ করার সময় খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ আপত্তি করলে সরবরাহকারীদের চাপের মুখে সে সব চাল গুদামে নিতে বাধ্য হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন মিলার জানান, গত কয়েক দিনে ৩ এবং ৬ নম্বর গুদামসহ বিভিন্ন গুদামে কয়েক মেট্রিক টন পচা চাল নেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নাটোর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পচা চাল নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এমন পচা চাল নাটোর খাদ্যগুদামে খুঁজে পাওয়া যাবে না। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ আবদুল ওয়াহেদ জানান, বাজার মূল্য সরকারি সংগ্রহ মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতে তাদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সরকারি মজুদ থেকেই বাইরে পাচার হচ্ছে চাল-গম ১১ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১২:০৪ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করার মতো দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়া পরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের অজুহাতে সরকার বাড়িয়েছে আমদানির পরিমাণ। কিন্তু সরকার বাহ্যত চাল-গমের আমদানি বাড়ালেও প্রকৃতপক্ষে সরকারি মজুদ থেকেই বাইরে পাচার হয়ে যাচ্ছে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চাল-গম। আর সেখানে ঠাঁই হচ্ছে নিম্নমানের বিদেশী গম ও পচা চালের। সরকারি গুদাম থেকে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের খাদ্যশস্য সরানোর সাথে খাদ্য বিভাগেরই একটি অসৎ চক্র জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, পরিবহন ঠিকাদার, খাদ্য পরিদর্শকসহ সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যোগসাজশেই প্রকাশ্যেই দেশের অনেক খাদ্যগুদামে এ কর্মকা- চলছে। খাদ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অবগত থাকার পরও অদৃশ্য কারণে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি খাদ্যগুদাম থেকে ভালো মানের চাল-গম সরিয়ে সেখানে নিম্নমানের চাল-গম রাখার একাধিক ঘটনা ধরা পড়েছে। গত ফেব্রয়ারি মাসে ফুল ওসিএলএসডি থেকে ৪শ’ মেট্রিক টন উন্নত মানের গম সরিয়ে সেখানে নিম্নমানের পচা গম রাখতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সংশ্লিষ্ট একজন পরিদর্শক। ওই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইভাবে ময়মনসিংহ সদর খাদ্য গুদামের আরেক পরিদর্শকও বাজার থেকে নিম্নমানের গম সংগ্রহ করে গুদামে রাখতে গিয়ে ধরা পড়েন। ওই খাদ্য পরিদর্শক সরকারি চাকরির পাশাপাশি অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে নিজেই সরকারি গুদামে খাদ্য পরিবহন ব্যবসায় জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, খাদ্য বিভাগের উচ্চপদস্থ কতিপয় কর্মকর্তার মদদেই খাদ্য পরিদর্শকরা এধরনের কর্মকা-ে উৎসাহিত হচ্ছে। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নীরব থাকায় খাদ্যগুদাম থেকে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চাল-গম অবাধে সরিয়ে সেখানে বিদেশ থেকে আমদানি করা খারাপ ও পচা চাল-গম রেখে দেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, সরকারি গুদাম থেকে দেশে উৎপাদিত ভালো মানের চাল-গম সরিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা নিম্নমানের চাল-গম মজুদ রাখায় সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বেশিদিন গুদামে রাখা যায় না। পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে খাদ্য কর্মকর্তারাও ৩য় গ্রেডের চাল-গমকে ২য় গ্রেড বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। মূলত, সরকারি গুদামে মজুদকৃত সবচেয়ে ভালো মানের চালকে খাদ্য প্রশাসনের ভাষায় বলা হয় ডিএসডি-৩, মাঝারি মানকে ডিএসডি-২ এবং নিম্নমানের চালকে ডিএসডি-১ বলা হয়। নিম্নমানের চাল গুদামে প্রবেশের সাথে সাথেই তা ভোক্তাদের জন্য বিতরণ করা হয়। কারণ এ গ্রেডের চাল বেশিদিন গুদামে রাখা নিরাপদ নয়। আর আপদকালের জন্য গুদামে মজুদ রাখা হয় ডিএসডি-৩ গ্রেডের চাল। এ গ্রেডের চালের মান খুবই ভালো। সূত্র আরো জানায়, দেশের বেশ কিছু খাদ্য গুদামেই খাদ্য কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে ডিএসডি-৩ গ্রেডের চাল ডিএসডি-২ গ্রেড হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন। এতে ওএমএস ডিলাররা উন্নত মানের চাল পেয়ে তা চোরাইবাজারে বিক্রি করে তার পরিবর্তে নিম্নমানের চাল কম দামে কিনে গ্রাহকদের দিচ্ছে। এতে ডিলাররাই আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছে। মূলত, আর্থিক সুবিধার বিনিময়েই ডিলারদের এ সুবিধা দিচ্ছেন খাদ্য কর্মকর্তারা। তাছাড়া অনেক খাদ্য পরিদর্শকরা চাল সংগ্রহের সময়ই উচ্চদাম দেখিয়ে নিম্নমানের চাল কিনেছেন। খাদ্য বিভাগের এক অনুসন্ধানে এমন ঘটনা ধরা পড়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লি খাদ্য কর্মকর্তাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে তা কার্যকর হয়নি। নেয়া হয়নি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থাও। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে দেশের কোথাও ডিএসডি-১ গ্রেডের চাল গুদামে নেই। তবে গুদামে খাদ্যশস্যের গ্রেড পরিবর্তনের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম আছে। কারিগরি পরিদর্শকরাই গুদামে গিয়ে খাদ্যদ্রব্য রাসায়নিক পরীক্ষা করে গ্রেড পরিবর্তনের প্রত্যয়ন দিয়ে থাকে। এ ব্যাপারে খাদ্য বিভাগ সবসময়ই নজর রাখে। অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেরে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবেব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি সরাইলে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে ডিজিটাল দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এখানকার খাদ্যগুদামের দায়িত্বশীল অসাধু ব্যক্তিরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মিল মালিকদের পাশাপাশি স্থানীয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ পন্থায় টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের চাল কিনে টার্গেট পূরণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা গুদামেই চালের বস্তা বদলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে ফেলেছে। টাকা দিলে খাদ্যগুদামে সবকিছু সম্ভব। সম্প্রতি গুদামের ভেতরে নারী কেলেংকারীর ঘটনা টাকা দিয়ে ধামাচাপা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা। অনেক মিল মালিক খাদ্যগুদামে কর্মকর্তার সঙ্গে রাত যাপন করেন। চলতি মৌসুমে গুদামে সংগ্রহ করা বেশিরভাগ চাল নিম্নমানের বলে জানা গেছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলে। সরাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ উপজেলার ৫১টি মিল মালিকদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি ২৬ টাকা ধরে এক হাজার ৯৭ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং ২৫ টাকা ধরে ১০৬ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ চাল সংগ্রহে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নেই। বুধবার বিকালে সরাইল উপজেলা খাদ্যগুদাম ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া দাবি করেন, মিল মালিকদের কাছ থেকে সঠিক নিয়মে আতপ ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত তিনদিন আগেই ১০৬ টন আতপ চাল সংগ্রহ শেষে টার্গেট পূরণ হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত সিদ্ধ চাল এক হাজার মেট্রিক টনের ওপরে সংগ্রহ হয়েছে। চাল সংগ্রহ কার্যক্রমে অনিয়মের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এখানে চাল সংগ্রহে কোন অনিয়ম করা হচ্ছে না। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় টিআর ও কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের বেকায়দায় ফেলে এখানকার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা প্রতি মেট্রিক টন চাল মাত্র ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকায় কিনে নিচ্ছে। যদিও টিআর-কাবিখার এক টন চালের সরকারি মূল্য ৩৪ হাজার টাকার বেশি। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা এই চাল সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে চড়া দামে অন্যত্র বিক্রি করে আসছেন। সম্প্রতি সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় আড়াইশ মেট্রিক টন টিআর-কাবিখার চাল কিনে খাদ্যগুদামের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা চলতি মৌসুমের চাল সংগ্রহ কার্যক্রমের টার্গেট পূরণ করেছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় বর্তমানে টিআর ৬৪০ ও কাবিখা ৬৫৩ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দের বিপরীতে বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ চলছে। এরমধ্যে টিআর-কাবিখার প্রায় ৬৫০ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রকল্প সভাপতি জানান, মাত্র ১৫ হাজার টাকায় এক টন চাল সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার টনপ্রতি দুই হাজার টাকা পিআইও অফিসে কমিশন দিতে হয়। সরকার নির্ধারিত দামের অর্ধেক ও পায় না। প্রকল্পের কাজ কিভাবে সম্ভব। প্রকল্পের ৬০ ভাগ টাকা চলে যায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী, খাদ্য কর্মকর্তা, পিআইও অফিসের পকেটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন