মনোনেশ দাস
সাংবাদিকদের সামনে অনেক ঘটনাই আছে যা লিখার সময় আবেগের ঘোর আসে। আপ্রাণ চেষ্টা করি, আবেগ সংযত করে নিরপেক্ষতার আয়নায় যা দেখি তাই লেখার। কল্পনাপ্রসূত বা উদ্ভট,আজগবী,বেখেয়ালী হয়ে রিপোর্ট বা প্রতিবেদন তৈরি করার সুযোগ নেই আমাদের। বাঁধাধরা নিয়মে পাঠকের মন কাড়ার সুযোগ নেই । যা দেখি যা শুনি নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে । এর মধ্যে থেকেই পত্রিকা, ব্লগ আর সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করার পর খুঁজি সাহিত্য।
প্রিন্ট মিডিয়ার কাটতি যেভাবে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে আবার দৌর্দন্ড প্রতাপে মহিরুহে পাঠকও ঝুঁকছে অনলাইন মিডিয়া, ইউটিউবে । আমরা ডিজিটাল এসব মাধ্যমে এসব তুলে ধরছি । এজন্য আমাদের কোড আনকোডের ঝামেলা তেমন একটা পোঁহাতে হচ্ছে না । ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিও অডিও রেকর্ড করে তা মিডিয়ায় এনে পাঠক দর্শকদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছি।
অনেক সাংবাদিক আছেন, যাদের কাছে খারাপ সংবাদ যার থেকে ভাল নিউজ আর হতে পারে না । খুন, ধর্ষণ, হানাহানি, সংঘর্ষ, নারী নির্যাতন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু আরো কত নৃশংস ঘটনা। আরো আছে সরকারি কর্মকর্তার ঘুষ, দুর্নীতি , অনিয়ম । রাজনৈতিক সুবিধাবাদী নেতাদের অপ রাজনীতি অবৈধ উপায়ে কালো টাকার বিত্ত বৈভবের সংবাদ। পাঠক এসব সংবাদ দেখতে বা পড়তে যেমন আগ্রহী হয়ে খুঁজে বেড়ান ঠিক তেমনি আমরাও চেষ্টা করি পরিসংখ্যান তথ্য অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে পরিবেশন করতে । এই তথ্য সংগ্রহ করতে কত বেগ পেতে হয় তা অনেকেই বুঝতে চান না । তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে, আমাদের কি অধিকার আছে এসব জানার ? এমন প্রশ্ন তোলা হয় । অনেকে এড়িয়ে যান আবার অনেকে অফিসিয়াল জটিলতার প্রসঙ্গ এনে ঠেলে দেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পথে । আমরা বিকল্প পথ খুঁজি । ঐসব কালো টাকার মালিকদের বাড়ি, গাড়ি, জৌলুষের চিত্রগুলো তুলে আনার চেষ্টা করি সমাজের তৃনমূল মানুষের কাছ থেকে।
আমরা যারা প্রিন্ট ভার্সনের যুগে সাংবাদিকতায় এসে এখন যারা ইলেকট্রনিক পোর্টাল বা বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলির সাথে তাল মিলিয়ে চলছি নিজেকে অভিজ্ঞ মনে করলেও, আমাদের স্বপ্ন বাস্তয়ানের মুল চালিকা শক্তি কিন্তু সেই দর্শক পাঠক বা দর্শকরাই। স্বপ্নের প্রসারে দর্শকের ভূমিকা মুখ্য, কালক্রমে যা এখন সামাজিক অভ্যাসে পরিণত। আমাদের খবর বা প্রতিবেদনের উৎস স্বপ্নের হলেও কল্পনাপ্রসূত নয়। শক্ত ভিতে বন্দি নীতি নৈতিকতা ও সামাজিক শৃংখল ও সংযমে । এরপরও নানান সমালোচনা, খোড়া যুক্তি, উপহাস, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য , হাশি তামাশা ও অবজ্ঞার চোখে দেখা হয় আমাদের । আমরা অন্তর্নিহিত আবেগ ভারসাম্যবোধ আর ধৈর্য ধরে এসব মোকাবিলার চেষ্টা করি । এটা সত্য যে, সাংবাদিকতার জন্য আবেগ প্রয়োজন। সহযোদ্ধা চারণ সাংবাদিক মোনাতাজ উদ্দিন ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর যমুনা নদীতে ড্রেজিং পয়েন্টের ছবি তুলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে সলিল সমাধি হন । আমারা বহন করি বিশেষ সাহস। বস্তুনিষ্ঠতা বাস্তবতার আলোকে রিপোর্টের ভারসাম্য ধরে রাখাটা আমরা জরুরি বলে করি। রিপোর্টের বস্তুনিষ্ঠা রেখে চেষ্টা করি যাতে বাস্তবতা নষ্ট না হয় । অহমিকা ভাব পরিহার করে নিরুদ্দেশ যাত্রা, কাল্পনিক আবেগ অনুভূতি সঠিক তাল লয় মাত্রা, কা-জ্ঞান ও বিচারবোধ দিয়ে সংবাদ উপস্থাপন আমাদের সূদূর প্রসারী যাত্রার মূল অংশ । মুক্তাগাছায় বাংলাভাই গ্রেফতার হয়েছিলেন । আমরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিষ্ফোরিত বোমায় বাংলা ভাইয়ের ক্ষত শরীর দেখেছি । এই ক্ষত আমাদের আবেগকে স্পর্শ করলেও আমরা তাকে ভয়ংকর হিসাবেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি । সারাদেশের এক মূর্তিমান আতঙ্ক ছিলেন তিনি । কিন্তু সেসময় যারা বাংলা ভাইয়ের সমর্থক ছিলেন তারা তার ক্ষত বা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার খবরও বেশি অংশে আশা করেছিলেন । আমরা চেষ্টা করি বস্তুনিষ্ঠ পাঠক যারা মূল বিষয়কেই মূল্যায়ন করবেন ।
মফস্বলের সাংবাদিক ভাইরা আমরা একে অপেরের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। পাঠকরা নিরপেক্ষ থেকে একটু মনোযোগী হয়ে পড়লেই পেয়ে যাবেন বাস্তবের বর্ণনা যা কখোনই আমাদের আবেগের সম্পর্শমাত্র নেই । যা সত্য তাই তুলে ধরা হয়েছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন