মনোনেশ দাস
বাসনপত্রের সাথে সাথে জড়িয়ে আছে দেশে কাল , সামাজিক অবস্থান, ব্যক্তিত্ব এমনকি ভালোবাসা। মানবজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে নিত্যদিন আহারের প্রধান মাধ্যম থালা বাটি এককথায় বাসনপত্র। মুক্তাগাছা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় এমনই একটি উপদান ছিল পাথরের বাসনপত্র। নিত্যদিনের ব্যবহার্য এই বাসন আর দোকানে মিলে না। পিতল, কাসা, মাটির বাসন, চিনা মাটির বাসন এবং বর্তমানে স্টিলের বাসন প্লাষ্টিক বাসনের প্রচলন বেড়ে যাওয়ায় পাথরের বাসনের ব্যবহার কমে যায়। এতে ঐতিহ্যবাহী পাথরের তৈরি বাসন থালা বাটি হারিয়ে গেছে। এখনও সংরক্ষণে থাকা কিছু বাসা বাড়িতে পাথরের থালা বাসন ব্যবহার দেখা যায়।
জানা যায়, চীনামাটিতে তৈরি বাসন ব্যবহারের আগে পাথরে তৈরি থালা বাসনের ব্যবহার বিকশিত হয়েছিল। থার্মাল শক প্রতিরোধী পাথরের থালা বাসন শরীরের তাপীয় শক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু উপাদানের সংযোজন ছিল যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ছিল । ১৯৫০ সালের ইউকে মৃৎশিল্প (স্বাস্থ্য ও কল্যাণ) বিশেষ প্রবিধানে এটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়, পাথরের পাত্রে প্রাকৃতিক কাদামাটি থাকে যার সাথে কোন চকমকি বা কোয়ার্টজ বা অন্য কোন ধরনের মুক্ত সিলিকা যোগ করা হয়নি।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার পরিপক্ক সময়কাল (২৬০০-১৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) জুড়ে পাথরের শিল্প ব্যাপক উৎপাদনের একটি শিল্পের সাথে পাথরের পাত্র তৈরি হয়েছিল। মধ্যযুগীয় চীন ও জাপান উভয় দেশেই পাথরের পাত্র খুবই জনপ্রিয় ছিল। চিনের মিং রাজবংশের সময়ে পাথরের পাত্র দরিদ্ররা ব্যবহার করতো। জাপানে পাথরের পাত্র, যেমন ওরিবি ও শিনোওয়ার চা অনুষ্ঠানে কাপ হিসাবে বর্তমানেও মূল্যবান। ইংল্যান্ড ১৮ এবং ১৯ শতকে পাথরের পাত্রের প্রচলন শুরু করে যা এশিয়ায় বিস্মৃতি লাভ করে।
মুক্তাগাছায় ডিস্পেন্সারী রোডের বাসিন্দা পাথরের বাসন ব্যবহারকারী মীরা দাস জানান, মুক্তাগাছা জমিদারি আমল থেকেই আমাদের পরিবারে পাথরের থালা বাসন পূজার কাজে ব্যবহার হয়ে আসছে। ঠাকুরের নৈবেদ্য ফলমূলসহ নানান কাজে এই বাসন ব্যবহার করা হয়। বংশ পরম্পরায় পাওয়া পাথরের বাসন এখন পূজা অর্চনায় ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, পাথরের বাসন ব্যবহার আরামদায়ক। তেল চর্বি বাসনে কম লেগে থাকায় পরিষ্কারে খুব একটা ঝামেলা নেই বললেই চলে। বাজারে এই সমস্ত পাথরের বাসন এখন আর পাওয়া না তাই পরম্পরার স্মৃতি টিকিয়ে রাখতে অতি যতেœ ব্যবহার করা হয় পাথরের এই থালা বাসন।
দরিচার আনি বাজারের পুরনো বাসন বিক্রেতা দিলাীপ সাহা, খোকন পাল জানান, এক সময় পাথরের বাসনপত্র দোকানে বিক্রি হলেও কয়েক যুগ আগে এর চাহিসা কমে যাওয়ায় বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা জানান, মুুক্তাগাছায় জমিদারি আমলে এরপর পাকিস্তান আমল সবশেষ আশির দশকেও পাথরের বাসন পত্রের প্রচলন ছিল। ক্রমান্বয়ে পিতল, কাসা, মাটির বাসন , চিনা মাটির বাসন এবং বর্তমানে স্টিলের বাসন প্লাষ্টিক বাসনের প্রচলন বেড়ে গেছে। যে কারণে দোকানে বিক্রি হয় না পাথরের তৈরি থালা বাসন।
মুক্তাগাছার স্থানীয় চিকিৎসকরা জানান, পাথরের বাসনপত্র স্বাস্থ্যসন্মত পরিবেশ বান্ধব।
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম বলেন, পাথরের বাসন আমাদের ঐতিহ্য। আমাদের ঐতিহ্যগুলো অবশ্যই ধরে রাখা উচিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন