
মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : মুক্তাগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চল কালিকাপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে পাঁচ সদস্যের মধ্যে চার জনই প্রতিবন্ধী।
চরম তাচ্ছিল্য আর দারিদ্রের নির্মম কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে জীবন সংগ্রাম করে জীবন-জীবিকা চালিয়ে যাচ্ছন।
জীবনযুদ্ধে টিকিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টারত পরিবারটির খোঁজ আজোও কেউ নেয়নি। পরিবারটির ভাগ্যে জুটেনি কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। রাষ্ট্র কর্তৃক প্রতিবন্ধী ভাতার প্রচলন থাকলেও সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় পরিবারের কোনো সদস্যের নাম নেই ভাতার তালিকায়। খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে প্রতিবন্ধী এ পরিবারটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তাগাছা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মধুপুর বন অধ্যুসিত অজপাড়া গ্রাম কালিকাপুরের দিন মজুর হাবুল মিয়া ও হাসিনা বেগম দম্পতির তিন সন্তান মিলে পাঁচ সদস্যের পরিবারের চার সদস্যই প্রতিবন্ধী। ওই পরিবার প্রধান হাবুল মিয়া নিজেও বাক প্রতিবন্ধী। তাদের সংসসারে জন্ম নেয়া তিন সন্তানের প্রত্যেকেই প্রতিবন্ধী। বড় সন্তান আজিজুল (১০) মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেজো সন্তান হামিদা (৮) ও ছোট সন্তান সাদিয়া (৩) জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। তারা দু’জনই বাক প্রতিবন্ধী।
পরিবারের একমাত্র স্বাভাবিক সদস্য সন্তানদের মা হাসিনা বেগম বলেন, ছেলেমেয়েদের বাবা নিজে একজন বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বাভাবিক কাজ কর্ম পেতে অনেক বিড়ম্ভনা পোহাতে হয়। আমার তিন সন্তানের সবাই প্রতিবন্ধী। এদের নিয়ে অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে সংসার চলে।
সরকারি ভাতা দেয়া হয় জেনে অনেকের কাছেই ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। এখন হাতিল গ্রামে কয়েকজন প্রতিবন্ধী মিলে গড়ে তোলা প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতিতে গিয়ে সন্তানদের হাতের কাজ শেখানোর পর সেখান থেকে কাজ করে সামান্য কয়েক টাকা আয় করে।
স্থানীয় প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। তাই প্রতিবন্ধীদের দুঃখ বুঝতে পেরে তারা ৯ জন প্রতিবন্ধী মিলে এ সমিতি গড়ে তুলেছেন। এখন তাদের সমিতিতে ৬‘শ জনের বেশি সদস্য রয়েছে। হাবুল এবং তার সন্তানরাও তাদের সমিতির সদস্য হয়েছে। তাদেরকে সেলাই ও হস্তশিল্পজাত জিনিসপত্র তৈরির প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশপাশি তাদের তৈরি জিনিসপত্র সমিতির মাধ্যমে বিক্রি করে সেখান থেকে সামান্য আয়ের ব্যবস্থা করে দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তাহমিনা নাসরিন জানান, মুক্তাগাছায় প্রতিবন্ধীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই তুলনায় ভাতা সুবিধা থাকে অনেক কম।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে সম্পৃক্ত করে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের মধ্যে থেকে যারা অধিক অক্ষম তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে সুবিধাভোগী তালিকা প্রস্তুত করা হয়। তবে একই পরিবারে চার জন প্রতিবন্ধী থাকার বিষয়টি তার জানা ছিল না বলে উল্লেখ করে বলেন, তাদের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে আগামীতে তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।
- See more at: http://www.mymensinghbarta.com/?p=7447#sthash.VuwQJRoD.dpuf
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন