photo

রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি


সমগ্র বিশ্বের এশিয়া মহাদেশের ভারত উপমহাদেশে সুপরিচিত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি (রাজবাড়ি) সংস্কার হওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে । বিশাল আকারের পুকুর বিষ্ণু সাগর, প্রাচীন স্থাপনা যুগল মন্দির, চাঁন খার মসজিদ, বিবির ঘর, ঘূর্ণায়মান নাট্য মঞ্চ, সাত ঘাটের পুকুর, জলটং, রসুলপুর বনসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্পট দেখে ঐতিহ্যবাহী মন্ডার স্বাদ নিয়ে যাচ্ছেন পর্যটকরা । জানা যায় , সতেরশ’ দশকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ করা হয় মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি । ১৮শ’ দশকে ভূমিকম্পে বাড়িটি ভেঙ্গে পড়লে লন্ডন আর ভারত থেকে সুদক্ষ কারিগর এনে ভূমিকম্প সহিষ্ণু করে পূণ:নির্মাণ করা হয় জমিদার বাড়ি । ১৯৪৭ সালের পর মুক্তাগাছা জমিদার দের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর ১৬ জন বংশধরের প্রায় সবাই চলে যান ভারতে । পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে তাদের নির্মিত ১৬ টি বাড়ি । ক্রমান্বয়ে এই বাড়িগুলিতে ( রাজবাড়ি ব্যাতিত) গড়ে তোলা হয় শহীদ স্মৃতি সরকারী কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, সাব রেজিস্ট্রি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নবারুণ বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান । জমিদারদের কয়েকটি বাড়ি এখনও বেদখল করে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করে আসছেন অনেকেই। বর্তমান সরকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতœতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের ফেব্র“য়ারিতে জমিদারবাড়ি সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নেয় । সংস্কারের ফলে ফিরে আসতে থাকে বাড়িটির আগের চেহারা। গত জুনে সংস্কার কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও সুনিপূণভাবে বাড়িটি আগের চেহারা ফিরিয়ে আনতে আরও সময় প্রয়োজন বলে জানান, সংশ্লিষ্ট সুদক্ষ শ্রমিকরা । প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার কাজের সময় বৃদ্ধি করে চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ । জানা যায় , একসময় নিন্মাঞ্চল ছিল মুক্তাগাছা শহর । জমিদাররা বসতি স্থাপনের আগে জমিদার বিষ্ণু আচার্য চৌধুরীর নামে বিশাল পুকুর (দিঘী )কেটে শহরকে উঁচু করেন । এরপর দীর্ঘ আড়াইশ’ বছর ধরে বন্যামুক্ত হয় মুক্তাগাছা । মুক্তাগাছায় জমিদারগণ অবস্থানকালে বহু স্থাপনা সৃষ্টি করেন। রোপন করেন বিরল প্রজাতির গাছ পালা। জমিদারগণ আজ নেই রেখে গেছেন তাদের স্মৃতি মূল্যবান বহু স্থাপনা । আজ যা পর্যটন সমৃদ্ধ। ময়মনসিংহ – টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছার রসুলপুর বনে বিশাল বিশাল শাল গজারি গাছ আর লাল মাটিতে আনারস বাগান দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। দেশীয় এসমস্ত গাছের ফাঁকে সূর্যের আলো অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে । জমিদারদের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেতে এই বনে গড়ে তোলা হয় বিদ্রোহী ফকির সণ্যাসী বাহিনীর কার্যক্রম । খাজুলিয়া এলাকায় বিবির ঘর নামের বাড়ি বানিয়ে তাদের দাবী আদায়ে অনেক জমিদারকে অপহরণ করে রাখে বিদ্রোহীরা । ঐতিহাসিক বিবির ঘর আজ পর্যটন কেন্দ্র । পর্যটনকেন্দ্রগুলি পরিদর্শন শেষে প্রসিদ্ধ মন্ডার স্বাদ ফিরিয়ে দেয় ক্লান্তি । আজ থেকে ২শ’ বছর আগে গোপাল পাল এই মণ্ডা তৈরি করেন । স্বপ্নে এক সাধু তাকে এই মণ্ডা তৈরির কলাকৌশল শেখান । দুধ দিয়ে তৈরি এই মন্ডা বর্তমানে প্রতিটি ২০ টাকা হিসাবে বিক্রি করা হয় । মুক্তাগাছা ব্যাতিত দেশের আর কেথাও এই মন্ডা পাওয়া যায় না । মণ্ডা বিক্রেতা গোপাল পালের বংশধররা জানান, এবছর পর্যটকের সংখ্যা বেশী তাই মণ্ডা বিক্রি বেড়েছে । জমিদার বাড়ি সংস্কারের ফলে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী ।www.muktagachanewsbd.wordpress.com পোড়ো বাড়ির দেয়ালে জৌলুস না থাকলেও প্রবেশপথের সুউচ্চ ফলক শক্তি পূজারি মুক্তাগাছার জমিদার বংশের শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস ধরে রেখেছে। মুক্তাগাছার ধ্বংসপ্রায় জমিদার বাড়ির শানশওকত আজো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত এই বিশাল বাড়িটি ১৮৮৯ সালে প্রথমবার এবং ১৮৯৭ সালে দ্বিতীয়বারে ভূমিকম্পে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে পুনঃনির্মিত বাড়িটিতে রয়েছে ভূমিকম্পসহিষ্ণু বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে ভিতরের বাড়িতে রাতে ঘুমাবার ঘরটি ইট পাথরের গড়া নয়। বিশালাকার আকৃতির কংক্রিটের ফাউন্ডেশনের উপর একাধিক লোহার রেলবারের খুঁটিতে দাঁড়ানো ঘরটির পাটাতন কাঠের এবং টিনের ৩তলা বিশিষ্ট ঘড়টির সিঁড়ি কাঠের নির্মিত। তারের জাল মধ্যে রেখে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়ে মাত্র দুই ইঞ্চি পুরু বেড়া ঘেরা চারদিকে সেঁটে আছে। ঘরের নীচতলা ফাঁকা : এদিক দিয়েই যাতায়াতের পথ । শোনা যায়, জাপান থেকে কারিগর এনে ঘরটি এমনভাবে নির্মিত হয় যাতে প্রবল ভূমিকম্পেও এটি ভেঙ্গে না পড়ে। চারদিক প্রাসাদোত্তম দালান-কোঠায় ঘেরা । বিশাল সামন্ত স্থাপনার মাঝখানে এই ঘরটি বেমানান মনে হয় না । কথিত আছে বাংলা ১৩০৪ সালের কোন এক বিকেলে প্রবল ভূমিকম্পে বাড়িটি গুড়িয়ে যায় এবং রাতভর মৃদৃ কম্পন অনুভূত হয়। জমিদার পরিবারের সবাই ভিত হয়ে প্রজাদের খরের ঘরে আশ্রয় নিয়ে রাত কাটায়। এরপর এই বাড়িটির পুনঃনির্মাণে ভূমিকম্প থেকে নিরাপদ মাত্রায় যোগ হয়। অধুনা বিশেষজ্ঞ মহলের ভূমিকম্প সতর্কীকরণ তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে হালের নির্মীয়মাণ বাড়িগুলো তৈরিতে ভূমিকম্পসহিষ্ণু প্রযুক্তির যোগ হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মুক্তাগাছার এই ভূমিকম্প নিরাপদ বাড়িটি সংরক্ষণ করা উচিত বলে পর্যটকদের দাবি। তাদের মতে, মহাদুর্যোগে নিরাপদ দিক নির্দেশনা দিতে পারে এর নির্মাণ শৈলি । - See more at: http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDhfMTdfMTNfMV8yNV8xXzY0MTIx#sthash.gxpfi8JD.dpuf

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন