photo

বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মুক্তাগাছার ৮টি মন্দির ভগ্ন দেহে

 


মনোনেশ দাস : যেখানে সকাল-সন্ধা কাসার ঘন্টা ,ঢাকের বাড়ি ,করতালের ঝুনঝুন শব্দ শোনা যেত, এখন সেখানে শুধু চাম বাদুরের ডাক শোনা যায় ।অযতœ আর  অবহেলায় প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে মুক্তাগাছার ৮টি মন্দির । দেশের অন্যতম ঐতিহাসিক এই মন্দির গুলোর ভেতওে  সাপ আর চাম বাদুর বাসা ঁেবধেছে । মন্দিরের প্রাচীন বিগ্রহ মূর্তি সবই চুরি হয়ে গেছে । এখন শুধু মন্দিরের ভগ্নদেহ কালের সাক্ষী  হয়ে দাঁড়িয়ে আছে । দেশে এরকম মন্দির অন্য কোথাও না থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগুলো রক্ষার জন্য আজ পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি । সোয়াশ”বছরের প্রাচীন পৌর শহরে ১৫টি মন্দির রয়েছে । বাষাটি ইউনিয়নের জগন্নাথবাড়িতে ১টি মন্দির । তন্মধ্যে ১৭শ” শতাদ্বীতে নির্মিত হয়েছে ৭টি , বাকী ৯টি ১৮শ”এবং১৯শ” শতাব্দীতে নির্মান করা হয় । ১৭শ” শতাব্দীতে নির্মিত মন্দিরগুলো হচ্ছে জমিদার বাড়ির ভেতরের রাজেশ্বরী মন্দির ,জমিদার বাড়ি সংলগ্ন ২টি শিব ও ৩টি শিব মন্দির( পাশাপাশি),লক্ষèীখোলার শিব মন্দির,কালিবাড়ির ১টি জোড়া শিবকালী মন্দির (পাশাপাশি) এবং জগন্নাথ বাড়ি মন্দির । এই ৮টি মন্দিরের অবস্থা  আজ বড়ই করুণ । ৪টি মন্দিরের যাবতীয় কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই । এগুলো বেদখল করে গৃহ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । বাকী ৪টি মন্দির বিলুপ্ত হবার পথে ।এক কালে হিন্দু জমিদার শাসিত অঞ্চল ছিল মুক্তাগাছা ।




১৭০৪ সালে শ্রীকৃষ্ণ অচার্য চোধুরী নবাব মুর্শিদকুলি খার অনুগ্রহ লাভ করে মুক্তাগাছায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং জমিদারী শাসন চালু করেন । নির্মাণ করেন বাসভবন ও মন্দির । শ্রীকৃষ্ণ ও তার পরবর্তী বংশধররা পর্যায়ক্রমে ভারত থেকে দক্ষ শ্রমিক এনে এ সমস্ত মন্দির তৈরি করেন বলে লোক মুখে শোনা যায় । ১৯৫৬ সালে সরকার জমিদারী প্রথা বাতিল করলে জমিদারদের প্রায় সবাই ভারতে চলে যান । এরপর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত লুটপাট হয় মন্দিরের বিগ্রহ ,দামী সরঞ্জামাদী এবং জমিদার বাড়ির মালামাল । ১টি মন্দির কিছুদিন আগ পর্যন্ত জমিদারদের শেষ বংশধর দেবাশীষ আচার্য দেখাশোনা করতেন । তার মৃত্যুর পর এটিও নিরব । বাকী ৪ঠি মন্দির পরিচালনা ও সংরক্ষণ করছেন স্থ্নীয় হিন্দুরা । তন্মধ্যে কালী বাড়ির কালী শিব (পাশাপাশি দুটি) মন্দিরের অবস্থা বড়ই করুণ । মন্দির দুটির চতুর্দিকের দেয়ালে ছাদে বট ছাড়াও অন্যান্য বৃক্ষ বেড়ে উঠছে । পলেস্তার নেই । ছাদ ও ইট ধ্বসে পড়ছে , দেবে যাচ্ছে মূল মন্দিরের পেছন ভাগ । মন্দিও দুটির  দেয়ালে এখনো প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের কারুকাজ ফুটে আছে । মন্দিরের চারদিকে আগে কারুকাজ মন্ডিত দেয়াল ছিল । জগন্নাথ বাড়ির মন্দিরটি প্রায় সম্পুর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে গেছে ।


মন্দিরগুলির বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, মন্দিরের অনেক জায়গা জমি স্বার্থান্বেসীমহল বেদখল করে রেখেছে । স্বাধীনতা যুদ্ধে এবং এর আগে মন্দিরের বিগ্রহ ও মূল্যবান সকল সম্পদ চুরি হয়ে গেছে । অনেকে এসে সংস্কারের কথা বলে । কিন্তু আজ পর্যন্ত মন্দির রক্ষার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি । সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ শীবকালি মন্দিরে তাদের সম্পদ হিসেবে সাইনবোর্ড লাগালেও সংস্কারের উদ্যোগ নেই ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন