পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্য মুক্তাগাছার মন্ডা

 06/09/2014

https://www.findglocal.com/BD/Dhaka/1549785905243108/Royal-Bengal-Food

বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্য মুক্তাগাছার মন্ডা ;

মনোনেশ দাস : কুমিল্লার রসমালাই, পোড়াবাড়ির চমচম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাচাগোল্লা ,নেত্রকোনার বালিশ ইত্যাদি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিজাত খাদ্যদ্রব্য । হাজারো ঐতিহ্যের দেশ বাংলাদেশ। কোন কোন স্থানে এমন কিছু উল্লেখযোগ্য বস্তু আছে যার কারণে ঐ স্থানটি বিখ্যাত হয়ে আছে। তেমনি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সঙ্গে মিশে আছে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিজাত দ্রব্য মন্ডার নাম। মুক্তাগাছার মন্ডার নাম শোনেননি ভোজনরসিকদের এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । মুক্তাগাছায় বেড়াতে এসে জমিদারদের বাড়ি দেখে যাওয়া যেমন অপরিহার্য , তেমনি এখান থেকে প্রকৃত মন্ডার স্বাদ না নিয়ে ফিরে গেলে ভ্রমনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে পর্যটকদের অভিমত।

মন্ডার নাম কিভাবে এলো...

শশীকান্তর পিতাঠাকুর সূর্যকান্তর আমলেই গোপাল পাল নামে এক লোককে এক সন্যাসী স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন। ১৮২৪ সালের ঘটনা। রাজা সন্যাসী বললেন, ব্ৎস, তোমার নাম গোপাল কেন?

--বাবা রেখেছেন তাই গোপাল। আমার বাবার নামও ছিল রামগোপাল।

--আর?

--যশোদা মায়ের পুত্রের নামও গোপাল।

--বেশ। সেই গোপাল কি করিত?

--গরু চরাত।

--এইতো মাথা খুলিয়াছে। গো-মানে গোরু। আর পাল মানে যে পালন করে।

--মানে গোরুর রাখাল। রাখাল গোরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।

-যথার্থ বুঝিয়াছ ব্ৎস? তোমাদের এলাকায় প্রচুর রাখাল আছে। আর আছে প্রচুর গোরু। এই খাঁটি গোরুর খাঁটি দুধ পাওয়া যায় মুক্তাগাছায়। দুধ দিয়া তুমি মণ্ডা বানাও। মণ্ডা বানাইলে তুমি পূণ্যপ্রাপ্ত হইবে।

পর পর কয়েক রাতেই এক সন্ন্যাসী স্বপ্নে তাকে এক প্রকার মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য তৈরী করার পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়ে আদেশ করলেন, “গোপাল, কাল তোকেই তুই এই জগতের মানবের খাওয়ার জন্য সুস্বাদু এই মিষ্টি তৈরীর কাজ শুরু করে দে। গোপাল সন্ন্যাসীর স্বপ্নাদেশে এক শুভ দিনে সেই বিশেষ মিষ্টি তৈরীর কাজ আরম্ভ করে দিলেন। মিষ্টি তৈরী শেষ করা মাত্র দেখলেন, স্বপ্নে দেখা সেই সন্ন্যাসী স্বশরীরে তার সম্মুখে উপস্থিত হয়ে মিষ্টি তৈরীর উনুনে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। গোপাল সন্ন্যাসী কে দেখা মাত্র উনার পদযুগলে মাথা রেখে ভক্তি ভরে প্রণাম করলেন। সন্নাসী বললেন, তোর হাতের তৈরী এই খাবার খেয়ে সবাই তোর অশেষ সুখ্যাতি করবে, আস্তে আস্তে তোর এই মিষ্টি একদিন জগৎ বিখ্যাত হবে এবং পুরুষানুক্রমে তুইও এই মিষ্টি তৈরীর শিল্পী হিসেবে পরিচিতি লাভ করবি। তোর অবর্তমানে তোর পরবর্তী পুরুষদের হাতেই শুধু সুস্বাদু এই মন্ডা তৈরী করা সম্ভব হবে। এই আশীর্বাদ করে সন্ন্যাসী অদৃশ্য হয়ে গেলেন। যাওয়ার আগে সন্নাসী সেই বিশেষ মিষ্টির নাম দিয়ে গেলেন।

..... মন্ডা। মুক্তাগাছার মন্ডা।

বংশধর

মণ্ডার স্রষ্টা গোপাল পাল ১৯০৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তখন তার বয়স ছিল ১০৮ বছর। গোপাল পালের প্রকৃত নাম রামগোপাল পাল পঞ্চম বংশধর রমেন্দ্রনাথ পাল, রবীন্দ্রনাথ পাল, রথীন্দ্রনাথ পাল, শিশির কুমার পাল ও মিহির কুমার পাল বর্তমান মণ্ডার দোকানের স্বত্বাধিকারী। তারা গোপাল পালের চুলাতেই এখনো মণ্ডা তৈরী করেন।

বিভিন্ন প্রশংসা পত্র:

মুক্তাগাছার শেষ জমিদার বাবু জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী বাংলা ১৩৬০ সালের ১ বৈশাখ ইং ১৯৫৩ সালে উনার নিজস্ব প্যাডে ৩য় বংশধর কেদার নাথা পালকে দেয়া প্রশংসাপত্র দেয়ালে কাচের ফ্রেমে বাধানো। আগে এখানে ছিল একখানা রূপোর প্লেটে খোদিত করা মহারাজার দেয়া গোপাল পালের প্রশংসা পত্রসহ আরো অনেক প্রশংসা পত্র, গোপাল পালের পর প্রথম বংশধর রাধানাথ পালের কাচের ফ্রেমে বাধানো ফটো। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ওগুলো চিরদিনের মত হারিয়ে যায়।

শুনেছি মুক্তাগাছার মণ্ডা নাকি উপহার হিশাবে পাঠানো হয়েছিল রাশিয়ার কমরেড স্ট্যালিনের কাছে। স্ট্যালিনের মতন কঠিন হৃদয় লোককে দ্রবীভূত করেছিল সেই মণ্ডা, এমনই নাকি ছিল তার স্বাদ। এবং তিনি রাশিয়া থেকে মণ্ডা-প্রেরক মুক্তাগাছার তৎকালীন মহারাজা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর কাছে একটি প্রশংসাপত্রও পাঠিয়েছিলেন। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও মণ্ডা নিয়ে একবার চিনে গিয়েছিলেন। আপ্যায়িত করেছিলেন মাও সেতুংকে।

Photos from Royal Bengal Food's post 05/09/2014

নাটোরের কাঁচাগোল্লা বিনা রসে রসগোল্লা ঃ নাটোরের কাঁচাগোল্লা নাম শুনলেই জিভে কেমন জানি জল এসে যায়। তবে দেশের যে ক’টি সুস্বাদু মিষ্টি জাতীয় খাবারের বেশ নাম-ডাক রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম নাটোরের কাঁচাগোল্লা। এই কাঁচাগোল্লা নামে কাঁচাগোল্লা হলেও এটি কিন্তু দুধের ছানা থেকে তৈরি শুকনো মিষ্টি। নাটোরের কাঁচাগোল্লা শুধু একটি মিষ্টির নামই নয়, একটি ইতিহাসেরও নাম। যা প্রাচীনকাল থেকে এই সুস্বাদু মিষ্টান্ন তৈরি করা হচ্ছে। আনুমানিক ধারনা করা যায়, প্রায় আড়াই’শ বছর আগে নাটোরের কাঁচাগোল্লার ইতিহাস পাওয়া যায়। তবে ১৭৫৭ সাল থেকে এই কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়াতে থাকে। রাজা-জমিদারদের মিষ্টিমুখ করাতে ব্যবহৃত হতো বিখ্যাত এই কাঁচাগোল্লা। এমনকি বিলেতের রাজপরিবার পর্যন্ত এই কাঁচাগোল্লা খেত। যেত ভারতবর্ষের সর্বত্র। শোনা যায় ইংল্যান্ডের রাণী ভিক্টোরিয়াও নাকি এখানকার কাঁচাগোল্লা খেয়েছে।

কাঁচাগোল্লা সৃষ্টির প্রচলিত গল্পটি-ঃ
কাঁচাগোল্লা তৈরির পেছনে একটি গল্প এখনো নাটোরের মানুষের মুখে মুখে শুনা যায় যে রাজভান্ডারে রেগুলার মিষ্টি সরবরাহ করতো সে সময়ের লালবাজারের এক মিষ্টি প্রস্তুতকারক মধুসূদন দাস। সেই মিষ্টি পুরো রাজপরিবার খেত আবার সেই মিষ্টিই পুজোতে ভোগ দেয়া হতো। একবার তিনি মিষ্টি তৈরির জন্য দুই মণ ছানা কেটে রাখেন। কিন্তু সকালে তাঁর প্রধান কর্মচারী দোকানে না এলে তিনি বিপাকে পড়েন। ছানা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তিনি চিনির গরম শিরায় ছানা ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকেন। শুকিয়ে এলে খেয়ে দেখেন মন্দ হয়নি। ভয়ে ভয়ে এর কিছু অংশ রানির কাছে পাঠিয়ে দেন। তা খেয়ে রাণী ধন্য ধন্য করেন। শুধু ছানা দিয়ে তৈরি করা হয় বলে নাম রাখা হয় কাঁচাগোল্লা। কাঁচাগোল্লার স্বাদ রসগোল্লা, চমচম, পানিতোয়া, এমনকি অবাক সন্দেশকেও হার মানিয়ে দেয়। এর রয়েছে একটি মিষ্টি কাঁচা ছানার গন্ধ যা অন্য কোন মিষ্টিতে পাওয়া যায়না।
ধীরে ধীরে মিষ্টি রসিকরা এই মিষ্টির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। তখন থেকে মধুসূদন নিয়মিতই এই মিষ্টি বানাতে থাকেন। কাঁচাগোল্লার সুখ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল। কাঁচাগোল্লার চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে মুধুসূদন পালের দোকানে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন মন ছানার কাঁচাগোল্লা তৈরী হতে লাগল। সে সময় ঢোল বাজিয়ে জানানো হতো কাঁচাগোল্লা কথা।
তারপর থেকেই অন্যান্য মিষ্টির সাথে ঐ নতুন মিষ্টিও নিয়মিত রাজার বাড়ীতে পৌছে দিতে হত

Photos from Royal Bengal Food's post 05/09/2014

ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লার রসমালাইঃ রসমালাইয়ের ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ঘোষ সম্প্রদায় দুধ জ্বাল দিয়ে তাতে ছোট রসগোল্লা ভিজিয়ে বিক্রি করতো তা ক্রমে রসমালাই নামে পরিচিতি পায়। এরপর থেকেই কুমিল্লার যেকোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে রসমালাই একটি অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে পরিচিতি পায়। কেউ কুমিল্লায় বেড়াতে এলে এই মিষ্টান্নের স্বাদ চেখে দেখতে ভুল করেন না। বাসায় ফেরার সময় প্রিয়জনের জন্যও নিয়ে যান অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমে ‘মাতৃভাণ্ডার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই ঐতিহ্যবাহী রসমালাই বিক্রি করা শুরু করে।

Telephone

Address


DOHS Baridhara
Dhaka
1206

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন