photo

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

চারণ সাংবাদিক ও নাগরিক সাংবাদিক

 

মনোনেশ দাস : সাংবাদিক হওয়ার জন্য আমাকে কেও অনুপ্রাণিত করেনি । মফস্বলে সাংবাদিকতা একটি জীবনব্যাপী শিক্ষা মনে করি । চারণ সাংবাদিক আখ্যা দিয়ে সম্প্রতি সংবাদপত্রে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে । আমাকে যারা চেনেন বা জানেন তাদের কাছে ভাল লাগলেও অনেকে আশ্চর্য হয়েছেন । অনেকে জানার আগ্রহ প্রকাশ করছেন, কে এই চারণ সাংবাদিক মনোনেশ দাস । আসলে আমি সাংবাদিকতায় একদিনে গড়ে উঠিনি । অনেক সময়, অধ্যাবসায়, মেধা, শ্রম, ধৈর্য্যসহ অনেক মূল্য দিতে হয়েছে । লেটার প্রেসের যুগে সাংবাদিকতায় এসেছি । ক্রমান্বয়ে ফ্যাক্স, কম্পিউটার, ইমেইল এসেছে । খোলা খামে হাতে লেখা পাঠানো সংবাদ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে কয়েকদিন বা এক সপ্তাহ পাড় হলে। মানুষের সচেতনতায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, কুসংস্কার , অশিক্ষা, কুশিক্ষা, ধর্ম, গোত্র, সম্প্রদায়, ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজ, প্রকৃতি, পরিবেশ, কীট- পতঙ্গ, গাছ- পালা, মাটি, পানি থেকে শুরু করে যা দেখেছি তাই লিখার চেষ্টা করেছি । আমি জানিনা সেগুলো আসলেই সংবাদ কি না ! আমার অধিকাংশ লেখা প্রকাশ হয়েছে ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত দৈনিক জাহান পত্রিকায় । যা অনলাইনে সংরক্ষিত নেই । বর্তমান অনলাইন যুগে ও সংবাদ লেখার ধারাবাহিকতায় নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছি এটাও একটি চ্যালেঞ্জ ছিল আমার। গুগলের বদৌলতে সার্চ ইঞ্জিনে আমার অনেক লেখাই ভেসে আসে মানুষের চোখের সামনে । বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, সামহোয়ারইন ব্লগ, ঢাকা টাইমসে অনেক লেখা আছে,যেখানে আমাকে সিটিজেন জার্নালিস্ট বলা হয়েছে ।  মূলত যারা আমার এসব লেখা উপলব্ধি করতে পারছেন তারাই আমাকে নিয়ে লিখছেন । অগ্রজ চারণ সাংবাদিক মোনাতাজ উদ্দিন ভাই লিখে গেছেন । স্মৃতি হয়ে থাকবেন অনন্তকাল । জীবমানে তিনি যে স্বীকৃতি পেয়েছেন মৃত্যুর পর আরো বেশি মূল্যায়িত হয়েছেন তিনি । আমার অনেক লেখা আছে যা ইন্টারনেটের প্রযুক্তির কাছে পৌছায়নি । হয়তো একদিন সেগুলোও আবিষ্কৃত হবে । 

বর্তমান প্রজন্ম চাহিদার সংবাদটি গুগলে অথবা ফেসবুক না দেখলে আনইনফর্র্মড হই এমন কথা বলেন, আর দেখলে মিস ইনফর্মড। আমাদের বিরুদ্ধেও মানুষের উষ্মার প্রকাশ দেখি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও । আসলে, আমরা যা জানি না তা যদি অকপটে স্বীকার করি যে, আমরা জানি না, তা হলে বোধহয় সমস্যাটা অনেক কম হয়। রাজনৈতিক সংবাদের চিত্রই ধরা যাক । বস্তুত আমি থাকি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় অথবা ময়মনসিংহ সিটিতে। সারাদেশের খবর রাখি কি করে ? সতের আঠারো কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ। মুক্তাগাছা বা ময়মনসিংহ শহরে সারা দিন কাদের সঙ্গে কথা বলি ? অর্থাৎ, আমার সংবাদের সূত্র কী ? আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নানা স্তরের নেতা, বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসি , সরকারি - বেসরকারি চাকুরীজীবি, চিকিৎসক, আইনজীবি, শিক্ষক, গবেষক, সহকর্মী সাংবাদিক, পত্রিকার এডিটরসহ অনেকেই। যদি এই শহরে আসা-যাওয়ার পথে কোনও চা বিক্রেতা অথবা ড্রাইভার, শিল্পি বা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয় তা হলেই ভাবি মরুভূমির ধূলিকনায় বেড়ে ওঠা গাছ-পালা, কীট-পতঙ্গ , ক্ষুদ্র প্রাণি এমনকি খারমান এর মত মত উদ্ভিদ দর্শন হয়ে যায়। কিন্তু আমার মত সেখানকার একজন অধিবাসী প্রান্তিক, তিনি কতটা গরীব, কতটা ধনী কি ? ভাবি আমার চেয়ে তিনি ধনী আবার অনেক চেয়ে গরীব। গরীব তাকে ভোট দেয়া যাবে না ।  আবার অমুক দল ক্ষমতায় গেলে ভাল করছে । তমুক দল দেশ ডুবিয়েছে । আবার প্রজাতিকূলে অদ্ভুত প্রকৃতির আকারের ও বর্ণের আবির্ভাব ঘটে । বিজ্ঞানীরা এই ধরনের পরিবর্তনের কারণ হিসাবে প্রজাতির জেনেটিক্যাল বৈশিষ্টে সেগ্রিগেশন ((ঝবমৎরমধঃরড়হ)) বা জ্বীনের ব্যতিক্রমধর্মী আচরণকে ফেনোটাইপ (চযবহড়ঃুঢ়ব ) দায়ী করেন । সাধারণত গবেষণাগারে কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভাবিত ধান বা শষ্যাদিতে এ ধরণের সেগ্রিগেশন হরহামেশা দেখা যায় । কিন্তু প্রকৃতিতে সেগ্রিগেশন খারমান । অর্থাৎ আগন্তুক এসেছে নেতা হয়ে খুবই বিরল ।

রাজনীতির মত আরো যে কত সংবাদ পড়ে আছে । যা আবিষ্কার করেন আমার মত সাংবাদিকরাই । বিশ^বিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার পাঠ চুকিয়ে কেও অফিসে, আবার কেও মাঠে কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন । আমাদের ত সকল বিষয় নিয়েই লিখতে হয় । মফস্বলে থেকে আমার লেখাও গোটা বাংলাদেশে ঝড় তুলে । মুক্তাগাছায় থেকেও কর্মক্ষেত্রের ব্যাসার্ধ থেকে ছিটকে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্রগ্রাম, রংপুর, সিলেট, ঢাকা যাওয়ার সময় পাই না। আমি নাকি সাধারণ মানুষের নাড়ি বুঝি! আমি নাকি চারণ সাংবাদিক ।


ছোটবেলায় দেখেছি, বাড়িতে আসা ডাক্তাররা নাড়ি টিপতেন । নাড়ি টিপে , চোখ, মুখ, জিহবা দেখে রোগ নির্ণয় করতেন । জ¦র হলে ম্যালেরিয়া না ফাইলেরিয়া থেকে হচ্ছে তা বোঝার জন্য সোনোগ্রাফি করতে বলতেন না। এখন তা না। ব্লাড , সুগারটেস্ট আরো কত টেস্টের রিপোর্ট দেখে ওষুধের প্রেসক্রিপশন দেন বর্তমানের ডাক্তার। মফস্বল সাংবাদিকদেরও অভিজ্ঞতা বেড়েছে । মুক্তাগাছায় সাংবাদিকতা শুরু করে বেসরকারি টেলিভিশনের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি , একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ,ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সদস্য ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছেন আবু সালেহ মো: মুসা।যিনি আমাকে দুই যুগ আগে থেকেই মুখে বলে আসছেন, আমি নাকি চারণ সাংবাদিক । আবার মুক্তাগাছার বাসিন্দা গণযোগাযোগ বিভাগের ছাত্র দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম দেশের বড় বড় ক্রাইম বিষয় নিয়ে লিখলেও জন্মভূমির সংবাদ খুব একটা প্রকাশ করেননি ।

বাংলাদেশে মফস্বল এলাকায়  সাংবাদিকদের সংগঠন প্রেসক্লাব গঠনের আগে চারণ ভূমিতে ঘুরে বেড়িয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতেন । মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করতেন। এমন প্রেসক্লাবগুলি শক্তিশালী হওয়ায় ভিত শক্ত হয়েছে । সাংবাদিকতায় বিজ্ঞানও আছে । এই বিজ্ঞানে সমীক্ষা একটা খুব কঠিন কাজ। মফস্বলের অধিকাংশ সাংবাদিক অপেশাদার এমনটা না হলেও বিপুল জনসংখ্যার দেশে ঠিক ঠিক মতামত পেতে গেলে সাংবাদিককে ব্যক্তিগতভাবে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করা দরকার। মফস্বলের মানুষকে সব সময় বোকা ভাবার কোনও কারণ নেই। অনেক সময় সত্য গোপন করেন দুর্নীতিবাজরা। এরা, উল্টো কথাও বলেন। 

অঙ্ক শাস্ত্রে কিউব স্কয়ারের চাইতে যেমন উপরে তেমনি দুই আর দুই চার সবাই বুঝি। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের ল্যাবরেটরিতে যেখানে বিচার্য বিষয় মানুষের আচরণ সেটা সবটাই বস্তুগত নয় । দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষের বিরুদ্ধে মানুষের যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে সংবাদপত্রের পাতায় তা সীমাবদ্ধ । আমরা অর্থাৎ মফস্বলের সাংবাদিকরা চেষ্টা করছি এসব লিখার পরিসর বৃদ্ধিতে ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন