পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২

লাশ রেখে আশ্রয় দানকারীর বাড়িতে ডাকাডাকি

 

মনোনেশ দাস :
জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই লাশ দাফনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন । জীবন সূচনা আর মৃত্যু সমাপ্তি। পৃথিবীর চিরন্তন সত্যের অর্থাৎ শেষ ঠিকানা গোরস্থানের খাদেম কামরুল হুদা । পরিবারের সাত জনকে নিয়ে ফুফুর বাড়িতে আশ্রয় তার । মানুষ গোরস্থানে লাশ রেখে আশ্রয় দানকারীর বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করেন । শৈশব, কৈশর বয়স থেকে নেশার মত লাশ দাফন কাফন যেন নিত্যদিনের একটা রুটিন হয়ে গেছে তার। কোনও বিরক্তি নেই এই কাজে। অক্লান্ত ভাবে করে চলেছেন। এমনও লাশ আসে যাদের পরিবারই মুখ তুলে চায়না । তাদের দাফন কাফনের ভার নিয়েছেন নির্দ্বিধায়। প্রচন্ড শীত- তাপ , ঝড়- বৃষ্টি অর্থাৎ বৈরি পরিবেশেও লাশ দাফন করতে হয় তাকে।
রাস্তায় কোনও অসহায় মানুষ দেখলে তাকে তুলে নিয়ে এসে সেবা করা, বাক প্রতিবন্ধী চাচাতো বোনের ভরন পোষনও করেন তিনি। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় কয়েক শতবর্ষ প্রাচীন লক্ষীখোলা কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্থান। এই প্রতিষ্ঠানে দেড়শ বছর ধরে খাদেম হিসাবে কাজ করেছেন কামরুল হুদার মত তার বাপ দাদাও ।
পরম্পরায় বত্রিশ বছর আগে ১৯৯১ সাল থেকে বাপ দাদার মত মাষ্টার রোলে চাকরি করে আসছিলেন তিনি।
কিন্তু হঠাৎই তার সংসারে নেমে এসেছে ঘোর অমানিষা । গত ছয় মাস ধরে বেতন নেই। পৌরসভা থেকে বেতন আসতো এই বেতন । বেতন না পেয়েও লাশ দাফন কাফন রক্ষণাবেক্ষণ করছেন তিনি। বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ছেলেমেয়ে আর বাক প্রতিবন্ধী চাচাতো বোনকে নিয়ে ৭ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
এরই মাঝে বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অভাব জেঁকে বসেছে চারপাশ থেকে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মাষ্টার রোল বন্ধ বলে জানানো হয়েছে। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি এসেছে বেতন বন্ধের।
কামরুল হুদা বলেন, পৈত্রিক সূত্রে ভিটা বাড়ি অর্থাৎ জমি জমা নেই। জন্মের পর থেকেই ফুফুর আশ্রয়ে তার বাড়িতে সবাইকে নিয়ে থাকি । বাবুর্চি বা পাচকের কাজে ডাক পড়ে । সেই কোনমতে চলছে সংসার ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন