পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

আব্দুর রাজ্জাক ছিলেন আমার সাংবাদিকতার শিক্ষাগুরু


 মনোনেশ দাস
আমার সাংবাদিকতার শিক্ষাগুরু ছিলেন, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক । কাকা ডেকে সম্বোধন করতাম । বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী হিসাবে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ছিলেন।
বহুগুনের নানামুখি প্রতিভার অধিকারী মেধাবী তিন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর কোম্পানী কমান্ডার তিনি মৌমাছির মধু দিয়ে বিভিন্ন রোগের ওষুধ আবিষ্কার তা রোগীদের উপর প্রয়োগ করেছেন । উনার রোগী হওয়া মানেই লাভজনক বিষয় ছিল । রোগীর বাজার- সদাই সবই দিতেন । গ্যাংরিন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি বের করেন ।
মুক্তাগাছা শহরের কালিবাড়ি পুকুরপাড়ের বাসিন্দা হাইমেনোকেমোথেরাপি প্র্যাাকটিস এবং মৌমাছির খামার নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন বাঁশাটি ইউনিয়নের লাঙ্গুলিয়া গ্রামে । সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, খামারবাড়ি ও গবেষণাগার । তিনি জ্ঞানের সেবায় নিরলস পরিশ্রমি ছিলেন।
বলতেন, প্রজ্ঞাহীন জ্ঞান নিষ্ফলা বৃক্ষ সমতুল্য । দীর্ঘদিন কিডনি সংক্রমনে ৬৯ বছর বয়সে  ২০১৮ সালের ১৮ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন । মৃত্যুকালে স্ত্রী দুই মেয়ে কাকন , বাধনকে রেখে যান ।  
কাকার লেখা হাইমেনোকেমেনো থেরাপি বই আমি পড়েছি । তিনি মুক্তাগাছার ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক কিছুই জানতেন । আমার লেখায় সহায়ক ছিল । কাকার বাবা মরহুম ইয়াকুব আলী মৌলভী মুক্তাগাছা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
বিনোদবড়ি থেকে মুক্তাগাছা জমিদার, ইতিহাস ও লোকজ চিকিৎসা আরো কত বিষয়ে পড়াশোনা ছিল তার। নব্বইয়ের শেষ ভাগে আঞ্চলিক পত্রিকা দৈনিক জাহান এর ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি একই সময় দৈনিক ইত্তেফাক মুক্তাগাছা সংবাদদাতার সংবাদদাতা করছি । আমার প্রকাশিত সংবাদ বা প্রতিবেদনগুলো তার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। তিনি ইত্তেফাক বাসায় নিয়মিত পড়তেন । আমি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান আর তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা । সেই সুবাদে সেই থেকে কাকার সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে । গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন সংবাদের উৎস সহায়ক সহযোগীতা করতেন আমাকে।
উনার চিকিৎসা বিষয়ে আমি সহযোগী ছিলাম । সেই সুবাদে গ্রাম গঞ্জে আমাদের একসাথে যাওয়া হত । সারা বছর জুড়ে শত শত গ্রাম ঘুরে কাকার রোগী খোঁজা আর আমার সংবাদ প্রতিবেদন খোঁজার নেশা। তিনি খোঁজেন ব্যতিক্রমী রোগী আর আমি খুঁজি ব্যতিক্রম সংবাদ । সেই সংবাদ যা আমি ব্যতিত অন্য কেউ প্রকাশ করেননি  । কাকা আবিষ্কার করেছিলেন, গ্যংরিন রোগের চিকিৎসা ।
প্রচন্ড খড়া, বৃষ্টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করে সংবাদ সংগ্রহ করে যাই । সংবাদ সন্ধানে বিচরণ করতে হয়  গ্রাম গঞ্জে , জনপদে। পশু পাখি, গাছ- পালা, উদ্ভিদ নানান রঙের মানুষ আরো কত সংবাদ উপকরণ খুঁজে পাই। একসময় গেছে সব লেখা প্রত্রিকায় ছাপা হওয়ার সুযোগ নেই।
এরই মাঝে এলো অনলাইন পত্রিকা, ব্লগ, ফেসবুক টুইটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম । অনেক লেখা খুঁইয়েছি । কিছু সংরক্ষিত আছে । যেগুলো ফিল্মের নেগেটিভ নষ্ট হয়ে গেছে । পত্রিকার কাটিংয়ের আঠা খসে যাচ্ছে । এযুগে অনলাইনে সংরক্ষিত থাকে। সাইট বন্ধ হয়ে গেলে চিরতরে হারিয়ে যায় ।   
সাংবাদিকতার পরিধি বেড়েছে । সূযোগ বেড়েছে । ফেসবুকের বদৌলতে তাৎক্ষণিক তুলে ধরা যাচ্ছে । তবে এবিষয়েও সচেতন থাকতে হবে আমাদের।
রাষ্ট্র বিরোধী, দেশ বিরোধী বা কাউকে আঘাত দিয়ে ছোট করে অর্থাৎ ক্ষতির সন্মুখিন করা অপরাধ । এটা থেকে সাংবাদিক , নাগরিক সাংবাদিকদের দূরে থাকতে হবে । এসব লিখে সাময়িক বাহবা পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে সাংবাদিকতা অবরুদ্ধ হয়ে যায়, সহকর্মীরা প্রশ্নবিদ্ধ হন ।
কাকা হারিয়ে গেছেন। আমাদের মাঝে রেখে গেছেন সৃষ্টিশীল কাজ । তার শিক্ষা নিয়েই মফস্বলের সাংবাদিকতার বহু বিষয় নিয়ে দোর্দন্ড প্রতাপের সাথে তিন দশক ধরে সংবাদ সংগ্রহ, পরিবেশন করতে পারছি নিরপেক্ষতার সাথে । গবেষণাধর্মী সাংবাদিকতা জীবনের মূলমন্ত্র হিসাবে আতœস্থ করেছি।
আমাকে চারণ সাংবাদিক সম্বোধন করে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করছেন সাংবাদিক ভাইয়েরা । নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সাংবাদিকতা করে যাবো যা আমার ধ্যানে- জ্ঞানে। সংসার, পৈত্রিক ব্যবসা- বাণিজ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে ঘুরে বেড়াই সংবাদ সন্ধানে । আজব নেশা সাংবাদিকতা । পাঠকদের সামনে তুলে ধরা সবচাইতে ভাললাগা ।
উপজেলা শহর, জেলা শহর, বিভাগীয় শহর , গ্রাম- গঞ্জ প্রত্যন্ত অঞ্চলে কিছু দেখলেই সংবাদ উপকরণ মনে করি। আসলে সংবাদ কিনা নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি । গুগল, বিং, ইয়াহু আরো কত সার্স ইঞ্জিনে দেখি অন্যের সংবাদ। বই- পুস্তক রেফারেন্স ঘাটতে লাইব্রেরি পাঠাগার যাওয়ার প্রয়োজন কমেছে । উইকিপিডিয়ায় তথ্যেও ভান্ডার। সেখানে ঘাটতি থাকলে লেখার আগ্রহ বাড়ে । নতুন কিছু ভাবনায় আসে ।
সত্য ঘটনা সংবাদ প্রকাশের পর অনেকে হুমকি ধমকি , রক্তচক্ষু মামলা, হামলা কতো ভয় দেখায় । রাজ্জাক কাকা পাশে দাঁড়িয়ে এসব উপেক্ষা করে মনোবল বাড়িয়েছেন । খুবই সহজ সরল মনের এই শিক্ষাগুরু হারিয়েছি যিনি সর্বদাই সদাহাস্যোজ¦ল কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছিলেন । নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আমাকে লেখার প্রেরণা দিতেন ।
নাগরিক থেকে সাংবাদিক হয়ে কঠোর পরিশ্রমী হতে শিখিয়েছেন। কাকা বলতেন, তুই চারণ সাংবাদিক এটা বুঝিস ? উত্তর না দিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে কাকার পানে চেয়ে থেকে পুলকিত হয়েছি ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন