photo

সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬

ময়মনসিংহে যানজট


মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহের ময়মনসিংহে ময়মনসিংহবাসী শহরের পাটগুদাম ব্রীজমোড়,চড়পাড়া, গাঙ্গিনারপাড়সহ বিভিন্নস্থানে অসহনীয় ও অমানুষিক যানজট এর সাথে অতি পরিচিত। দেশের অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহবাসীকে এই যানজটের কারনে যে কত প্রকার কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয় তা কারোরই অজানা না। কিন্তু এর কি কোন সমাধান নেই ? এ সমস্যা উৎপাদনশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে অনিশ্চিত করে তুলছে। বিদেশিরা ময়মনসিংহকে অস্বস্থির দৃষ্টিতে দেখে যানজটের কারণে। বলা যেতে পারে, যেসব কারণে ময়মনসিংহে দেশি- বিদেশি বিনিয়োগ বিঘিœত হচ্ছে, যানজট তার অন্যতম। যানজটে দুর্ভোগ কেবল ময়মনসিংহে নয়, পৃথিবীর অনেক শহরেই দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। যানজট নিরসনে অনেকের ভাবনা সড়ক ও অবকাঠামো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন সড়ক ও অবকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বৃদ্ধি পাওয়ায় যানজট বৃদ্ধি পায়। এর সঙ্গে দূষণ, দূর্ঘটনা, জ্বালানী ব্যয়, অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ও যাতায়াত খরচ বৃদ্ধি পায়। এভাবে চক্রাকারে সবকিছু বাড়তে থাকে এবং অশেষ যানজটের কবলে পরতে হয়। যানজট সমস্যা নিরসনে অপ্রয়োজনীয় ও অদক্ষ যাতায়াতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। শহরে চলাচলের জন্য অল্প জায়গা নিয়ে বেশি মানুষ পরিবহণ করা যায় এরকম বাহনকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া অল্প দূরত্বে মানুষ প্রয়োজন মেটাতে পারবে সেইভাবে নগর পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। তাহলে যাতায়াত চাহিদা কমে আসবে। এর পাশাপাশি অটোবাইক, রিকশা, প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। কারণ অটোবাইক, রিকশা প্রাইভেট কার সবচেয়ে অদক্ষ বাহন। এসমস্ত নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ময়মনসিংহ শহরের বর্তমান সড়ক অবকাঠামোর মাধ্যমেই সুষ্ঠু পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। ময়মনসিংহ শহরের যানজট নিরসনের ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলির গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হচ্ছে, বিগত কয়েক বছরে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন গবেষণা, প্রকল্প ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সকল পদক্ষেপের ফলাফল যদি বর্তমান অবস্থা হয়, তবে বিগত দিনের কার্যক্রমগুলির যথার্থতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকে। যানজট নিরসনে প্রথমে ময়মনসিংহে দিনের বেলায় ট্রাক চলাচল নিষেধ করা, আন্তঃজেলা বাসের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, বিভিন্ন সড়কে রিকশা বন্ধ করা, ট্রেনের সময়সূচী পরিবর্তন, পথচারী পারাপারের ক্রসিং বিলুপ্ত করে ফুটওভার ব্রিজ তৈরি এবং ফ্লাইওভার তৈরি উল্লেখযোগ্য। এ সকল কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রচুর অর্থ ব্যয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার প্রর্বতনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হব্ ে। বাস, ট্রাক,অটোবাইক, রিকশা, ট্রেন, এবং পথচারী চলাচলকে যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হলেও কেন সমস্যার সমাধান হয়নি, তা প্রশ্নের অবতারনা করেছে। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে এখনো কতিপয় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান যানজট হ্রাসের নিত্য নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে প্রকল্প গ্রহনে ব্য¯ Í। নতুন প্রকল্প গ্রহনের পূর্বে বিগত দিনের প্রকল্পের ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও পরিকল্পনার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বিগত দিনে যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে যাতায়াতের কার্যকর মাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে অটোবাইক, রিকশা প্রাইভেট গাড়ীর মতো যানজট সৃষ্টিকারী যানকে নিয়ন্ত্রণ করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বরং এগুলির অবাধ চলাচলের জন্য পার্কিং সুবিধা তৈরিসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বা পরিকল্পনাধীন রয়েছে। ভেবে দেখা প্রয়োজন, প্রায় সকল মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা হলেও অটোবাইক প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। পরিকল্পনাবিদ বা নীতিনির্ধারকগণ কি জেনে শুনে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? নাকি এ বিষয়টি সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত ধারণার অভাব ছিল? একটি বিষয় সত্য, বিগত দিনের ক্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনার ফলাফল ময়মনসিংহ শহরের বর্তমান যানজট। ময়মনসিংহ শহরের অধিকাংশ সড়কেই অটোবাইক , সিএনজি , রিকশা প্রাইভেট গাড়ীর কারণে যানজট সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহনকারী ব্যক্তিবর্গ এসমস্ত যানের সুবিধাভোগী। তাই তারা এগুলি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এখনো কোন বলিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। যদিও নীতিনির্ধারক ও পরিকল্পনাবিদগণকে নৈতিকভাবে ব্যক্তিস্বার্থ অপেক্ষা গণমানুষের স্বার্থ রক্ষায় দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন। পরিকল্পনা গ্রহনের ক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব, জ্বালানি ও অর্থ সাশ্রয়ী, গণমূখী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। সরকারীভাবে নীতি গ্রহনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোকে প্রধান্য দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। শুধুমাত্র জনস্বার্থ পরিপন্থি নীতি ও পরিকল্পনার কারণে জ্বালানি নির্ভরতা, পরিবহণ ব্যয় এবং যানজট বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু নীতিগত এ ক্রুটিগুলোর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত না করে আবারও ব্যাপক অর্থ ব্যয়ে জ্বালানি নির্ভর পরিবেশ দূষণ এবং পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে। পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন মানুষের পক্ষ থেকে এ সকল কার্যক্রম বন্ধের আহবান জানানো স্বত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিগত দিনের মতোই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। যা আগামী দিনের ময়মনসিংহ শহরের অধিকাংশ মানুষের বসবাসকে আরো ব্যয়বহুল ও কঠিন করে তুলবে। যানজট সমস্যাসহ সকল সমস্যার সমাধান মূলত নির্ভর করে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকদের উপর । তারা যদি আন্তরিকভাবে চান যে, যানজট সমস্যার সমাধান করবেন, তবে খুব সহজে অল্প সময়ের মধ্যেই তা করতে পারেন । আর, যদি সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আন্তরিক না হন, তবে তারা এই সমস্যা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর জিঁইয়ে রেখে, সমস্যার সমাধান করব, করছি বলে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারেন, তাতে তাদের কিছুই যায় আসে না । নীতিনির্ধারকগণ আন্তরিক হবেন এই কামণা ময়মনসিংহবাসীর ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন