মুক্তাগাছায় পারিবারিক বিরোধে খুন জখমের হুমকি
স্টাফ রিপোর্টার
ময়মনসিংরে মুক্তাগাছায় পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ নিরীহ পরিবারের লোকজনের সম্পদের ক্ষতিসাধন ও খুন জখমের হুমকি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে হাজী মো: শামছুল হক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ।
উপজেলার ৩নং তারাটি ইউয়িনের কলাদিয়া গ্রামের এঘটনায় ভুক্তভোগী মো: আকরাম হোসেন (০) বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ।
স্থানীয় সুরুজ মিয়া ও মোছা: আবেদা খাতুনের পুত্র মো: আকরাম হোসেন লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, বিবাদী মৃত লাল মিয়ার পুত্র হাজী মো: শামছুল হক (০) ও তার পুত্র মো: শরিফুল ইসলাম (২), মো: ইব্রাহিম খলিল(২২) আমার প্রতিবেশী। তাদের সাথে আমাদের পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে । আমার বসত বাড়ি সংলগ্ন আমার বাড়ির পাশে বিবাদীদের বর্গা জমি আছে । গত ৩ সেপ্টেম্বর বিকালে বিবাদীগণ আমার খেতের আইল কাটার সময় আমি বাধা নিষেধ করায় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে । বিবাদীগণের আচরনে প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে মারপিট করতে উদ্দত হয়। আমি প্রাণের ভয়ে দৌড়াইয়া বসত ঘরে উঠে দরজা লাগিয়ে দেই । তারা আমার পেছন পেছন এসে আমার বসত বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে আমার টিনসেট বসত ঘরের বেড়া বাউন্ডারি টেনের বেড়া দা দিয়ে কুপিয়ে আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে । ঘটনা আশপাশের লোকজন প্রত্যক্ষ করেন ও শুনেন । উপস্থিত লোকজনের সামনেই তারা আমাকে খুন জখমের হুমকি প্রদর্শণ করে চলে যায় ।
এব্যাপারে হাজী মো: শামছুল হক জানান, অভিযোগ মিথ্যা। আমি স্থানীয় এমপি ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খলিদ বাবুর সাথে চলাফেরা করি ওরা জানে। আমার ভাই বাড়ির পাশের স্কুলের শিক্ষক ও আরেক ভাই পুলিশ । ওরা মিথ্যা কথা বলে । জমি আমার চাচার ।
থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। আভিযোগের তদন্তকারি কর্মকর্তা মুক্তাগাছা থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শাশ্বত দত্ত চৌধুরী জানান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশনায় সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে।
মুক্তাগাছায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর নি¤œাঙ্গে জ¦লন্ত সিগারেটের ছেঁকা
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর চেষ্টা। রাজী না হওয়ায় শিকলে বেঁধে স্ত্রীর উপর নির্যাতন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের খুকশিয়া গ্রামে। গৃহবধুর বাবা মুকছেদুল আলম ৯৯৯ ফোন করে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিকলবাধা তালা ভেঙ্গে গৃহবধুকে উদ্ধার করে। এঘটনায় মুকছেদুল আলম বাদি হয়ে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯ (০৯), তারিখ: ০৪/০৯/২০২২ইং।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের কুমারগাতা গ্রামের মুকছেদুল আলমের বড় মেয়ে মাহফুজা আক্তার তামান্না (২২) কে পাশ^বর্তী খুকশিয়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে মনিরুজ্জামানের সাথে পারিবারিক ভাবে ২০১৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের ২বছরের মাথায় তাদের ঘরে এক মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের পর থেকেই জামান তার ব্যবসা বাড়ানোর কথা বলে তামান্নার বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিতে থাকে। ইতোমধ্যে তামান্না বাপের বাড়ি থেকে ১লক্ষ টাকা এনে দেয়। কিন্তু তার আরও টাকা চাই। নির্যাতনের ভয়ে তামান্না বাপের বাড়িতে এসে অবস্থান নেয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) জামান তার শাশুড়িকে বুঝিয়ে সুজিয়ে তামান্নাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। শুক্রবার দিবাগত রাতে জামান তামান্নাকে পুনরায় টাকার জন্য চাপ দেয়। টাকা আনতে অস্বীকার করলে তাকে জ¦লন্ত সিগারেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছেঁকা দেয়। পরশিরা তার পরিবারকে খবর দিলে তামান্নার পিতা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তামান্নাকে উদ্ধার করে ম্ক্তুাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
এব্যাপারে তামান্না বলেন, যৌতুকের টাকা আনতে অস্বাীকার করলে আমাকে দেহব্যবসার করতে বলে। এতে আমি রাজি না হলে আমাকে জোর পূর্বক সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে চারটি জ¦লন্ত সিগারেট পর্যায়ক্রমে তার মুখ চেপে ধরে সিগারেটের ধোঁয়া তাকে গিলতে বাধ্য করে। এসময় সিগারেট দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাসহ নি¤œাঙ্গে ছেঁকা দেয় এবং বলে টাকা না দিলে বেশ্যাগিরি করে তোর কাছ থেকে টাকার উসুল তুলব। কোনভাবে তার স্বীকারোক্তি না পেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে সারা রাত গরুর গোয়াল ঘরে রেখে দেওয়া হয়। সকালে বিষয়টি প্রতিবেশিরা জানতে পেরে তামান্নার পরিবারকে খবর দেয়। তামান্নার বাবা মুকছেদুল আলম ৯৯৯ ফোন করে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পুলিশের সহায়তায় শিকলের তালা ভেঙ্গে তামান্নাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এসময় তামান্নার ৪ বছরের মেয়ে সিদরাতুল জান্নাত সুমাইয়াকে পুলিশ স্বামীর পরিবারের লোকজনের কাছে তুলেদেন। এ সময় তামান্না ও তার পরিবারের লোকজন পুলিশকে পাষন্ড স্বামীকে গ্রেফতার করতে বললেও পুলিশ তা করেনি।
এ বিষয়ে তামান্নার মা জুলেখা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আসছে। গত শুক্রবার রাতে টাকার জন্য আমার মেয়েকে টাকার জন্য মারধর করে, জ¦লন্ত সিগারটের আগুন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছেঁকা দেয়। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এব্যাপারে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক বলেন, তামান্নার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গসহ শরীরের নি¤œাঙ্গে জ¦লন্ত আগুনে পোড়ার দাগ পাওয়া গেছে।
মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিটিমকে উদ্ধার করে। থানায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধারকালে ঘটনাস্থলে তামান্নার স্বামী জামান উপস্থিত থাকলেও পুলিশ গ্রেফতার না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান বিষয়টি একান্তই স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার বলে ওই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এখন তারা বাড়ি-ঘর ফেলে পালিয়েছে। জামানকে ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন