photo

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

অনাদরে জন্মানো বিষকাটালী ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে

মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহের সর্বত্র গ্রামাঞ্চলে দেখা মেলে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বিষকাটালী। অঞ্চলভেদে বিষকাটালি বিসাতু, এগরা, মইছা আগরা নামেও ডাকা হয়। প্রজাতিভেদে দুই ধরনের ফুল দেখতে পাওয়া যায় । গোলাপি-সাদা আর সাদা। হাজার বছর ধরে ভেষজ ওষুধ হিসাবে গাছটি গ্রাম বাংলায় চিকিৎসার্থে ব্যবহার হত। এখনও অনেক প্রবীন এটি ব্যহার করেন। গাছটির ডাল পাতা মাছ ধরার টোপ কেঁচো সংগ্রহে, পোকা-মাকড় থেকে গৃহস্থালি পণ্য সুরক্ষাসহ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এসব কাজে আধুনিক ক্যামিকেলে তৈরি বিকল্প হাতের নাগালে আসায় বিষকাটালী গাছের বিষয়ে সচেতন নয় বর্তমান প্রজন্ম।
বিষকাটালীর ব্যবহারকারীূ প্রবীনরা বলেন, বিষকাটালী গাছ বাড়ির আঙিনায়, ঝোপ- ঝাঁড়, ক্ষেত খামারে বিনাচাষে জন্মাত এগাছ। এখন খুব একটা দেখা যায় না। আমাদের গ্রামে কিছু বিষকাটালি গাছ আছে, বর্ষা মৌসুমে কুইচা ও মাছ শিকারীরা পাতা এক বালতি জলে ভিজিয়ে কচলিয়ে সে জল দুর্বা ঘাসে ছিটিয়ে যভ ঢেলে দেয়। কিছুক্ষন পর মাটির নিচে থাকা কেঁচো বিষকাটালির বিষ সহ্য করতে না পেরে মাটির উপরে চলে আসে, মাছ শিকারিরা কেঁচোগুলো সংগ্রহ করে কুইচ্ছা মাছ ধরার চাইয়ে দিয়ে রাখে। চমকপ্রদ মহা ঔষধীগুন হলো বিছানার ছারপোকা তাড়াতে বিছানার নিচে পাতা বিছিয়ে দিলে ছাড়পোকা পালায়। বসত ঘরে চিকার উপদ্রবে খাটের নিচে পাতা রাখলে অসহ্য গন্ধে পালিয়ে যায়। ক্যাটফিস বা শিং মাছের কাটার আঘাতে শরীরে বিষকাটালীর পাতা বেঁধে রাখলে অল্প সময়ের মধ্যে যন্ত্রনা সাড়ে।
পোকার কবল থেকে ধান, গমসহ ফসল সুরক্ষায় গোলায় রাখা হয় বিষকাটালীর পাতা।
আব্দুল্লা আল মাহদী বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি দাদা এই পাতা ব্যবহার করতেন, মুরগির ডিম সুরক্ষায়। ডিমের নীচে পাতা রাখতেন। শরীরের খোসপাঁচড়া, ফোঁড়ার চিকিৎসায় এরপাতা বেঁটে লাগিয়ে দিলে দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে যায়। এছাড়াও এর পাতা ২-৩ দিন পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি সবজি ক্ষেতে প্রয়োগ করলে পোকা-মাকড় দূর হয়।

চট্রগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোহাম্মাদ ইসমাইল বলেন, বিষকাটালীর বিষ ব্যাথার মহা ঔষধ। বীজ ব্যবহার করে টিউবারকিউলোসিস নিরাময় করা যায়, ভীমরুলের কামর থেকে উৎপন্ন বিষের জ্বালা কমাতে বিষকাটালির রস ব্যবহার করা হয়। কৃমি নাষক ,জীবানু ঘা, আলসার ও ব্যথা নাশক। এটি বিষাক্ত তাই গবাদি পশু খেলে মারাও যেতে পারে। ক্যান্সার, চামড়ার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
হালিমা আক্তার বলেন, বিষকাটালী গাছের পাশাপাশি এর ব্যবহারও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিনা চাষে অনাদরে জন্মানো বিষকাটালী ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান প্রজন্মের তার চারপাশের প্রকৃতির প্রতি উদাসীন হওয়ার মতো বেশ কিছু কারণকেই দায়ী করছেন পরিবেশবিদেরা।

ছবি ক্যাপশণ, মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) ; অনাদরে জন্মানো বিষকাটালীর ঝোপ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন