মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহে খেসারীর দুরাবস্থা। এক সময় বাংলাদেশে খেসারী প্রধান ফসলগুলোর মধ্যে গন্য হতো । ভাতের পাশাপাশি খেসারীও গ্রাম বাংলার হত দরিদ্র মানুষের খাবার হিসেবে বিবেচিত হতো । কয়েক দশক আগেও মাঘ-ফাল্গুনের ধুঁ ধুঁ মাঠ খেসারীর সবুজে একাকার হয়ে থাকতো। খেসারী কালাইয়ের পরিপুষ্ট সীম শিশুরা আগুনে ঝলসিয়ে খোলা মাঠে বনভোজন খেতো । চৈত্রের ফসল কাটার সময় কৃষকের আঙ্গিনা ভরে উঠতো খেসারী দানা আর খরকুটায়। গরুর পুষ্টিকর খাবার হিসাবে এই খরকুটা সারা বছর ব্যবহৃত হতো।
মুক্তাগাছা তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছিল খেসারী চাষের উল্লেখযোগ্য অঞ্চল । হাওর ও চরাঞ্চলে বর্ষা শেষে বন্যার পানি নেমে গেলে কাদাময় মাঠে বিনা চাষেই বুনে দেয়া হতো খেসারী। বন্যা প্লাবিত ঊর্বর মাটিতে ফলত পর্যাপ্ত খেসারী । খেসারী থেকে বিভিন্ন খাবার প্রস্তুত হতো বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় প্রতিটি গৃহস্থের বাড়িতে। এর মধ্যে কাচা কলাইয়ের পিঠা অন্যতম। খেসারীর পায়েস লাল চিনি আর গাভীর দুধে রান্না হতো যা ছিল সবার প্রিয়। খেসারীর ছাতু ভাতের বিকল্প হিসেবে গন্য হতো ।
বৈশাখের মেলার ঋতুতে বিভিন্ন মেলায় খেসারীর ভাজা কলাই (ফাটা কলাই) খেসারীর খোরমা , খাজা ইত্যদি পাওয়া যেতো । এখন আর খেসারীর সে কদর নেই। এর প্রধান কারন দুর্নাম । এর ডাল খেলে লেথারিজম নামক রোগ হয়। বিশেষজ্ঞ মহলের এ ধরনের অভিমত প্রদানের পরই খেসারী লোপ পেতে থাকে। এখনও কিছু অঞ্চলে খেসারীর চাষ হয় যা অতি নগন্য। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে লাখ লাখ টন খেসারীর ডাল আমদানী করতে হচ্ছ্।ে খেসারী ডালের পিঁয়াজু এখনও সবার প্রিয় খাবার ।
পরিবেশবাদী বিজ্ঞানীদের গ্রীণ হাউজ এফেক্ট নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় আগামী বিশ্বে যে ধরনের চাষাবাদের স্বপ্ন দেখছেন তার মধ্যে ধানকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিনা চাষে যেসব ফসল ফলানো সম্ভব সেগুলোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। অথচ বিনা চাষের ফসল খেসারীর চাষ ইতিমধ্যেই এদেশে ত্যাগ করা হয়েছে।
ছবি ক্যাপশণ , মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) :বাজারে আনা খেসারী কলাই
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন