photo

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ময়মনসিংহে বেদে


ময়মনসিংহে বেদে । মনোনেশ দাস:শঙ্খিনী,পদ্মিনী ,কালনাগ,গোখরা,আহলাদ,দারাজ,বাঁশপাতা,আরো নাম না জানা কতো জাতের সাপ আর বেজি। এই সাব বেজি নিয়েই সাপুড়িয়া বা বেদে বা বাইদ্দা সম্প্রদায়ের বসবাস। নিজেদের জন্য নয়, অর্থের প্রয়োজন বেজি আর সাপদের জন্য। সাপের খেলা দেখুন আর রোগ সারাতে সাদা লজ্জাবতী নিন,বিনিময়ে সাপকে দুধ, মাছ খাওয়ার জন্য যার যা মন চায় দেন। গ্রাম বাংলায় সাপুড়িয়াদের একথাগুলো চলে আসছে কত যুগ ধরে তার হিসাব যেমন কেউ রাখে না, তেমনি স্থায়ী বাড়ি ঘর না থাকায় তাদেরকেও কেউ মনে রাখে না। খোলা আকাশের নীচে, গাছ তলায়,অস্থায়ী ঝুপরিতে রেল লাইনের ধারে, নদীর পাড়ে নৌকায় এদের বসবাস। পুথিগত বিদ্যা না থাকলেও সাপ ধরা আর সাপ নিয়ে খেলা দেখানোর কৌশলই এদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। আর এ সম্প্রদায়ের নারীরা ছোট বাক্সে সাপ নিয়ে বাড়ি বাড়ি বাত ছাড়াতে চোঙ্গা দিয়ে মানুষের শরীর থেকে রক্ত আনা,দাতের পোকা বের করা, ইমিটেশনের গহনা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের রুটি রুজির জোগান দেয়। বেদে সম্প্রদায়ের আছে অতীত, বর্তমান নেই ভবিষ্যত। সরকারীভাবে এদের সংখ্যা কত তা জানা যায়নি। জন্ম নিয়ন্ত্রনে এরা বিশ্বাসী না হওয়ায় প্রতি পরিবারে ছেলে মেয়ে ৪/৫ জনের কম নয়। বেদে সম্প্রদায়ের উজ্জল,হারুন,সেলিম,ওসমান,ফেরদৌস,আরিফ জানান,তাদের জমি জমা না থাকায় কোন চিন্তা ভাবনা নেই।খাজনা বা ট্যাক্স দিতে হয় না। দুখঃ একটাই তা হচ্ছে, এদের যোগাযোগের মাধ্যম পরিবর্তন হওয়া। পরম্পরায় এরা নদী পথে নৌকা যোগে চলাফেরা করতো। এখন নদ নদী শুকিয়ে যাওয়ায় স্থল পথে যাতায়াত করতে হয়। এমনিতেই ছন্নছাড়া জীবন । সাপের খেলা দেখিয়ে , সাদা লজ্জাবতী বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যায় তার সিংহভাগই ব্যয় হয়ে যায় ,সাবের খাওয়া দাওয়া ও চিকিৎসায়। নৌপথে খরচ নেই। স্থলপথে যাতায়াতে বাস,রিকসা ও ভ্যান ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হয়। বৈরী আবহাওয়ার কারনে বছরের অনেক সময় বেকার হয়ে বসে থাকতে হয় ।খাদ্যাভাবে তখন তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন সাপগুলি হাড্ডিসার হয়ে পড়ে। সারা বছর মানুষের রোগ ব্যাধীর চিকিৎসা করলেও নিজেদের বেলায় বিনা চিকিৎসায় কুড়ে কুড়ে ভূগে এরা । লোক লজ্জার ভয়ে এ কষ্টের কথা থেকে যায় তাদের অন্তরে। তবে বেদেরা জানান,২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র ৪/৫ ঘন্টা ঘুমানো হয়। বকী সময থাকতে হয় মজমা জমিয়ে সাপ খেলা দেখানো, লজ্জাবতী গাছ সংগ্রহ , তাবিজ কবজ ক্রয় ,তৈরী এবং বিক্রি করতে। এ থেকে যা আয় হয় তার সমূদয় অর্থই ব্যয় হয়ে যায়। এতো কিছুর পর কষ্টে লালন পালন করা সাপ যখন তাদের দংশন করে, তখন আর কিছু করার থাকে না । সাপের দংশনে বেদে মৃত্যুর ঘটনা নেহায়েত কম নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন