photo

বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

ময়মনসিংহে শেয়াল বাঁচার আকুতি


মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহে এক সময় শেয়াল আতংকে থাকতেন মানুষ । এদের আবাস্থল সংকটে শেয়াল এখন মানুষ আতংকে । একবার জনসন্মুেেখ এলে এদেনর বাঁচার আশংকা খুবই কম। হাজারো বছর ধরে প্রতিবেশী হিসাবে এদের বসবাস মানুষের সাথে। প্রাচীনকাল থেকেই অগনিত কবি , মহাকবিগণ এদেরকে নিয়ে লিখেছেন, কবিতা, গল্প আর ইতিহাস। একটি সময় ছিলো মাংসাশী এই প্রাণীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন মানুষ । কত মানুষের হাঁস, মুরগী চুরি করে নিয়ে গেছে আর কত মানুষকে এরা কামড়ে দিয়েছে তার হয়তো সঠিক কোন হিসাব নেই আমাদের কাছে । জলজ প্রাণী কাঁকড়া এদের প্রিয় খাবার । খাল-বিল,নদ- নদী এবং হাওড়ের পাশে এরা গর্ত থেকে নিজের লেজ ফাঁদ হিসাবে ব্যবহার করে কাঁকড়া ধরে খাওয়ার দৃশ্য মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নেয় । ফাঁদ হিসাবে গর্তে লেজ ঢুকিয়ে দেয় এরা । লেজে কাঁকড়া কামড় দিয়ে ধরলেই লেজ বের করে খেয়ে নেয় তাদের প্রিয় খাবারটি। ক্রমশ:সমস্ত জলাশয়গুলিতে বাণিজ্যিক মাছ চাষের কারণে শেয়ালের প্রিয় খাবার ক^াকড়াও বিলুপ্তির পথে ।বন-জঙ্গল কেটে মানুষের প্রয়োজনে আবাসস্থল ও কৃষি জমি ব্যবহারের কারণে শেয়ালরা আজ বাসস্থান সংকটে । আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস- মুরগি পালনের কারণে এরা আর সহজে তাদের খাবারও চুরি করে খেতে পায় না । ফলে বাসস্থান আর খাদ্যাভাবে এরা এখন বিপন্ন কিংবা বিলুপ্ত প্রাণীর হিসাবে । কিছুদিক আগেও এরা বিকাল থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত হুক্কা হুয়া ডাকে মাতিয়ে রাখতো পাড়া-মহল্লা, মাঠ-ঘাট । এই তাদের কেহুয়া কেহুয়া ডাকের চিৎকার পূঁজি মায়েরা তাদের দূরন্ত শিশু- কিশোরদের ঘুম পাড়াতেন । লোককথায় এদেরকে পন্ডিত হিসাবে সম্বোধন করা হয়ে থাকে । অথচ এই এরা পন্ডিতি করেও নিজেদের বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে ।নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে এদের সুরও এখন পাল্টে যাচ্ছে । এখন বাঁচার তাগিদে হারানোর শংকা নিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠ । আগের মত দেখা মেলেনা এদের আবাসস্থল মাটি খোঁড়া গর্ত । একসময় এদের গর্তে শুকনো মরিচ পুঁড়িয়ে ঢুকিয়ে দিতো দুষ্ট শিশুর দল। পোড়া মরিচের ঝাঁঝালো গন্ধে গর্তের ভেতর থেকে শেয়াল বেরিয়ে দিত ভোদৌড়। কুকুাের সাথে এদের দ্বন্দ্ব চিরকালের । প্রবাদে আছে, গৃহস্থের বাড়িতে এরা ,মুরগী-হাঁস চুরি করতে এসে পোষা কুকুরের রোষাণলে পড়ে । কুকুর এদের ধাওয়া করলে, এরা নাকি প্রাকৃতিক বায়ুত্যাগ করে । সেই গন্ধে পিছু হটা থেকে কুকুর ফিরে আসে । শোনা যায়,এখন অনেক মানুষের প্রিয় খাবার শেয়াল। প্রতিনিয়ত এরা শিকারে পরিণত হয়ে বেঘোড়ে প্রাণ দিচ্ছে । এদেরকে হত্যাকালে উৎসুকরা বলে,খুব ভাল হইছে! একদম উচিৎ শিক্ষা হইছে।এরা তখন মৃত্যু যন্ত্রনায় মানুষের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে । বেঁচে খাকার আকুতি জানায় ।আর মানুষ তখন এদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালিয়ে দেয় ।অথচ এই পৃথিবীতে মানুষের মত ওদেরও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে ।এভাবে এদের আবাসস্থল ধ্বংস হলে প্রাণবৈচিত্র মারাত্নক হুমকীর মুখে পড়বে। বাস্তবে দেখতে না পেয়ে প্রজন্ম বই-পুস্তকে কল্পনায় জানবে এরাও একদিন আমাদের প্রতিবেশি ছিলো ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন