
প্রফেসর বিমল কান্তি দে : বসন্ত বাতাসে কখনো কখনো বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ অামার বাড়ি অাসতেও পারে।
নইলে গান বাঁধা হলো কেন? তবে বসন্তে ফাগুন দিনে কখনো কখনো এক গৃহস্থের ঘরের অাগুন অন্য বাড়ির চালে চলে অাসতে পারে। প্রায় দু'শ বছর অাগে এমনি একটি দুর্ঘটনা ময়মনসিংহ শহরে ঘটেছিল।
ভাগ্যান্বেষণে বরিশাল থেকে নৌকায় চেপে এক
কোবরেজ মশাই সেই সময়ে ময়মনসিংহে অাসেন এবং রাজবৈদ্যরূপে প্রতিষ্ঠা পান।তার বৃদ্ধ বয়সে তিনি সেকালের ময়মনসিংহ শহরের নানাবিধ বর্ণনা দেন।তার অন্যতম হলো সেকালের উকিল বা মোক্তার বাবুরা কিভাবে অাদালতে যাতায়াত করতেন। সব উকিল বাবুর অাভিজাত্যের পরিচায়ক হিসাবে একজন পরিচারক বা ছত্রধর ঢাউস এক তালপাতার গোল ছাতা কাঁধে ফেলে, বোচকা পাতি নিয়ে বাবুকে অাদালতে পৌঁছে দিতো, নিয়ে অাসতো। বর্ষাকালে রাস্তা কাদাময়, সুতরাং বাবুর জুতাজোড়াও ব্যাগে করে নিতে হতো। হুঁকো, কল্কি, টিকে তামাক সব পুটুলিতে বেঁধে ছাতার নীচ দিক থেকে ঝুলানো থাকতো।উকিল বাবু অাদালতে গিয়ে পা ধুয়ে জুতো পরে রিয়্যাল বাবু সাজতেন। তারপর তামাক সেজে হুঁকোটা বাবুকে ধরিয়ে দিয়ে চাকরের অাপাত শান্তি।
সেই বদ্যি মশায়ের অপর বয়ান থেকে জানা যায় সেকালে ময়মনসিংহ বা নাসিরাবাদ শহরে
কোনো টিনের বাড়ি ঘর ছিলনা, সব ছিল ছনের ঘর। সেই সময়ে একবার বসন্তকালে, ফাল্গুন বা চৈত্র মাসে, শহরের সুতার পট্টিতে
গৃহস্থ বাড়িতে অাগুন লাগে। প্রচন্ড গরমে, ধোপাইল্যা বাতাসে( ডু ইউ নো হোয়াট ইজ কল্ড ধোপাইল্যা বাতাস?) অাগুন অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তখন ত দমকল ছিলনা। টিনের বালতিও নয়। বড়লোকের বাড়িতে পিতলের দুচারটি বালতি থাকতো। অাগুন নিভানোর উপায় শুধু কলস দিয়ে জল ঢালা। সুতরাং যা হবার তাই হলো। সুতার পট্টির অাগুন দূরের কালীবাড়ী পর্যন্ত শত শত ছনের ঘর ভস্মীভূত করে শান্ত হলো।

ময়মনসিংহ শহরের কোন জায়গাটি ছিল সুতারপট্টি তা কেউ জানেনা। সেই ঐতিহাসিক পরিচয়টি ধারণ করে রেখেছিল বর্তমান অামপট্টির নাদিয়া গফুর এন্টারপ্রাইজ বা কয়েক বছর অাগের তাজ ফার্মেসী নামক টিনের চাল এবং ইটের দেয়াল দেওয়া দোতলা বাড়িটি। এই জমিটি কিনে মো ওসমান গনি বেপারী ১৩৪২ সনে এই হাফ বিল্ডিং বাড়িটি তৈরি করান। পরে তার উত্তরাধিকারী ১৪১১বঙ্গাব্দে
বাড়াটির সংস্কার করান। কিন্তু বর্তমান অর্থনীতি ও বহুতল ভবন নির্মাণের প্রবল চাপেবাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। সেই সাথে বর্তমান নাম অামপট্টি বা মদনবাবু রোডের প্রবল চাপে
১০৭ নং সুতারপট্টি ঠিকানা ও নামটি ভবনের সাথে সাথে চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে।
পরিস্থিতি দেখে মনে হয় অাগামী ২০৫০ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ শহরে কোন টিনের ঘর দেখা যাবে না। যেমন এখন গ্রাম বাংলায় প্রতি হাজারে মাত্র একটি ছনের ঘর থাকতে পারে।
ছবির সাথে সাথে তথ্যটি জানান দিয়ে অামি কি বোকামি করেছি??
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন