পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আমার সাংবাদিকতা - মনোনেশ দাস

 

মফস্বলে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আামাদের অনেক সময় গোয়েন্দাগিরিও করতে হয় । সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি ধরা বাধা নিয়মের গন্ডিতে থেকে কর্মকর্তারা সকল তথ্য দিতে চান না । নানা যুক্তিতে তথ্য জানতে চাইলে এড়িয়ে যান। মানুষের মৌলিক অধিকার এবং গোপনীয়তা সংবিধান-স্বীকৃত, জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্বভৌমত্বের বিষয়টি বিবেচনা করলে তা এড়িয়ে যাওয়ার উপায়ও নেই ।
সংবাদপত্রে প্রিন্ট ভার্সনের যুগে তথ্য সংগ্রহের জন্য উপজেলা পর্যায়ে সংবাদের সূত্র বা তথ্য সংগ্রহ করতে জেলা এমনকি বিভাগ পর্যায় পর্যন্ত দৌড়াতে হয় মফস্বলের সংবাদিকদের ।
সরকারি কর্মকর্তারা কিভাবে অর্থ আত্নসাত , দুর্নীতি , অনিয়ম , ঘুষ বা অনিয়ম করেন তা খুঁজে বের করা অনেক কঠিন কাজ । ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে ঝুঁকি থাকে মামলার । আরো কত হয়রানি । গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রাচীন সেই যুগ আজ অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে । এখন ইন্টারনেট যুগ । বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের সার্ভারে তথ্য যোগ করে আপডেট হচ্ছে । গোয়েন্দাগিরি করে সংবাদ সংগ্রহ করার কাজটাও কমছে ।
যদিও এখন মানুষের কোন গোপনীয়তা আর গোপন থাকছে না । কলম কিংবা বাটন মোবাইলে পার্সোনাল ছবি ও ভিটিও ধারন করলে কেউ টেরই পান না । এনরয়েড মোবাইল ফোন দিয়ে প্রায় সকল তথ্যই সংগ্রহ করা যায় এখন । চলছে মোবাইল সাংবাদিকতার যুগ । গোয়েন্দাগিরির জন্য মফস্বলের সাংবাদিকদের দোষারোপ করা হলেও আন্তর্জাতিকভাবে নানা প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দাগিরি করছে । এজেন্ট সারা দুনিয়ায় নানা গোপনীয় উপায়ে তথ্য সংগ্রহের জাল বিস্তার করেছে । গোপন ফাইল সংরক্ষণকারীদের ফাঁদে ফেলা কিংবা টাকার লোভ দেখিয়ে তথ্য হস্তান্তরের কাজ দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ করতে অত্যাধুনিক যন্ত্রের সহায়তা লাগেই। এজেন্টদের কাজে লাগিয়ে আড়ি পাতা, বন্ধুত্ব করা, বাগিং করা, গোপন ক্যামেরা লাগানো এসব হল পন্থা। গোপনে জিপিএস দিয়ে কারও গতিবিধি মাপা অনৈতিক হলেও গুপ্তচরদের তা করতেই হয়। মফস্বলের সাংবাদিকরাও আধুনিক হচ্ছে ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রযুক্তি সংস্থার শীর্ষে থাকা স্পাইওয়্যার পেগাসাস পৃথিবীর আলোড়ন সৃষ্টিকারী রাষ্ট্রের অবৈধভাবে দখলকারী রাজনীতিবিদ, অগাধ কালো টাকার মালিক, দুর্নীতিবাজদের উপর এনরয়েড বা আইফোনের ডিভাইজে রিমোট সার্ভেল্যান্স চালানোর পাওয়ার বাস্তবায়ন করেন । এরআগে অ্যাপের মাধ্যমে ছদ্মবেশ ধারন করে মেলওয়ার মোবাইলে ঢুকতে হলে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন হতো। ক্লিক করতে হত কোনও ওয়েবপেজ খুলতে, কিংবা ডাউনলোড করতে হত কোনও অ্যাপ বা লিঙ্ক। পেগাসাস অনুমতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর ঘটনাও ঘটেছে । মানুষের কাছে ভাগ্যই ভরসা।
বৃহত্তর ময়মনসিহে সাংবাদিকতার বিচরণ ভূমিতে দেখেছি ক্রমশ ফুলে ফেপে বেড়ে উঠেছে দুর্নীতিবাজরা। ধাপে ধাপে তারা এগিছে চলেছে । ময়মনসিংহে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবির শাখা আছে । আজ পর্যন্ত তাদের নিকট থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বা ময়মনসিংহ বিভাগের একজন দুর্নীতিবাজের নাম প্রকাশ করে বার্ষিক রিপোর্টে অনুযায়ী, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দিতে দেখিনি। অথচ মফস্বলের সংবাদিকরা অসংখ্য দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। এজন্য অনেক সাংবাদিককে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে । এসব দুর্নীতিবাজদের কারনে দেশের গণতান্ত্রিক মর্যাদা নিয়ে উদ্বেগ, মৌলিক স্বাধীনতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে । আবার মফস্বলের মানুষের দু:খ, কষ্ট , লাভ ক্ষতি হল তা নিয়েও ভাবি আমরাই। শ্রমিক, কৃষক, মজুর, ক্ষুদ্র বিক্রেতা তাদের সংকট, সাফল্য ও প্রত্যাশা নিয়ে লিখি । গরু-বাছু, হাস- মুরগি পালন, ধান, পাট, সরিষা, আলু, বেগুনের ফলন ভাল হয়েছে কিনা, বীজ তৈরিতে সমস্যা, মড়ক, নতুন চাষে সম্ভাবনা, সঠিক দাম পাচ্ছেন কিনা, চালকল মলিকদের দৌরাত্ম আছে কিনা , হয়রানির শিকার হয়েছেন কিনা । মাছ চাষে ভাগ্য বদল , সার ব্যবসায়ী, বীজ বিক্রেতা, সরকারী প্রনোদনা আরো কত রিপোর্ট । উদ্ভাবনীসহ আরো কত সংবাদ । এসব প্রান্তিক মানুষের মাঝখানে যে এনজিও শ্রেণি, যারা চার শতাংশে ঋণ দিয়ে ষোলো শতাংশ বুঝে নেন। তাদেরকে নিয়েও লিখার চেষ্টা করি । মফস্বলে জমি- জমা নিয়ে ঝগড়া ঝাটি, দাঙ্গা ফ্যাসাদ লেগেই থাকে । ঘটনা ঘটার পর পুলিশ আর সাংবাদিকরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন । পুলিশ জমির কাগজপত্রের বিবাদের সমাধান দিতে পানেন না । সমাধান মিলে আদালতে । পুলিশ ঘটনাস্থলের আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন । এই জমি জমা নিয়ে সংবাদের জন্য সাংবাদিককে এবং মামলার এফআইআর এবং চার্জশীট ও আইও নিয়ে পুলিশকে দায়ি করেন ভূক্তভোগীরা । সংকটের মূল কারণ কি ? একটু গভীরে গেলেই বুঝি একই জমির দাবিদার অনেকে । উত্তর পাইনা যা তা হলো - জমির সিএস, আরওআর, বিআরএস আছে । দলিল আছে । সিএস সূত্রে যদি জমির মালিক হলেন । তার আগে ঐজমি কার ছিল । জানি জমির মালিক সৃষ্টিকর্তা । তিনি ত কাউকে লিখে দেননি। প্রান্তিক মানুষরা জানেন না যে, সোজা পথে বিচার-প্রতিকার পাওয়া সম্ভব অসম্ভব মিশে গেছে। সাত ডিক্রি এক দখল গ্রামের মানুষ ব্রিটিশদের মৌখিক আইন ডিগ্রি বুঝতে চান না। গ্রামের অনেকেই পেশি শক্তি , টাকা প্রদর্শন করে বিবাদ সৃষ্টি করেন।এই জমি জমার প্যাচে ফেলে কত প্রান্তিক মানুষের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা নামধারী সমাজের সুশীলরা। সরকারি কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মত এদেরও কালো টাকা নিশ্চয়ই কোন ব্যাংকে রেখেছেন । স্থানীয় সাংবাদিকরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে কার এ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে জানতে চাইতে পারেন । আরো প্রশ্ন থেকে যায় ওই টাকার উৎস কোথায়। কালো টাকা ও উপার্জন স্বচ্ছ বা সাদা টাকার মালিকদের কিভাবে আমরা সংবাদে আনবো ?
নব্বই সাল থেকে মুক্তাগাছা শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজে টানা চার বছর কাটিয়েছি। কলেজের পড়াশোনায় খুব একটা মন বসতোনা। সাংবাদিকতা নেশা হয়ে গেছে তখন। বাবার ইচ্ছায় আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার মত রেজাল্ট আসছে না পরীক্ষায় । ফুল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা ম্লান দেখে অর্থাৎ আমার রেজাল্টের এদুরবস্থা দেখে বাবা মাকে নিয়ে আমাদের এক নিকট আত্নীয় যিনি ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ছিলেন তার বাসায় মিষ্টি নিয়ে গিয়েছিলেন । রেজাল্ট ধ্বসের কারণে সেখানেও গিয়ে কাজ হয়নি । আর কে হাইস্কুলের মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা ছাত্র ছিলাম । এরই মাঝে বাবা একপ্রকার কানে ধরে নিয়ে যান , ময়মনসিংহ হোমিওপ্যাথি কলেজে । সেখানে ভর্তি। হই সেখানে নৈশ ক্লাসে পড়েছি । পড়ায় মন বসতো না । সাংবাদিকতার পাশাপাশি রাজনীতি আর খেলাধুলা ভাল লাগত । এখন সাংবাদিকতার আড়ালে থাকা প্রতিভাগুলো হারিয়ে ফেলেছি। সাংবাদিকতার ধ্যানে বিভোর । মফস্বলের সাংবাদিকদের অনেক সংগঠনের নেতৃত্ব দেই । ময়মনসিংহ সদর প্রেসক্লাব, মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়ার চেষ্টা করি । আমার শখ ছিল, চামারদের নিয়ে সংগঠন করবো । যার কোন শাখা প্রশাখা নেই । যার একমাত্র সংগঠক, কর্মী এবং নেতা অর্থাৎ আমি অল ইন অল । চামাররা একটি জাত বা সম্প্রদায় । আমাদের পরম্পরায় তারাও বংশানুক্রমে আমাদের বাসা- বাড়ি, রাস্তাঘাট পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন ( সাফসুতরো ) রাখেন ।
কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি পেশায় জড়িয়ে রাজনৈতিক দলের শাখা আছে। চামারদের নিয়ে শাখা এমনকি প্রশাখা সংগঠন নেই । তাদের মত মুচিরাও অবহেলিত। আমাদের আচরণ কখনও কখনও তাদের সাথে তুলনা করি । ওরা ভাল মানুষ । গায়ে সুগন্ধি মাখেন ।
দৈনিক জাহানের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি হিসাবে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল , জামালপুর , শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের জেলা উপজেলাগুলিতে সাংবাদিক হিসাবে বিচরণ করেছি । স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে সখ্যতা হয়েছে । এখানে কেউ এসেছেন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী, রাজনৈতিক দলের নেতা, চাকুরিজীবীসহ অনেক পেশা থেকে আবার অনেকে এসেছেন। দর্জি , ভেন্ডার, দোকানদার বা ব্যবসায়ীরাও এসেছেন। সাংবাদিকতাকে ভালো লাগে বলেই এসেছেন তারা । এদের দেখে সাংবাদিকতার আগ্রহ আরো বেড়ে যায় । আবার নিরোৎসাহিত হই তখন দেখি মাদক কারবারী ও অপরাধীরা সাংবাদিকের পরিচয় পত্র ঝুলিয়ে ক্ষমতা দেখান । দৈনিক জাহানে আইডি কার্ড দেয়ার সময় সম্পাদক হাবিব ভাই কানে কানে বলেছেন, ভাই বিজ্ঞাপনের বিষয়টা মাথায় রেখো । পত্রিকার হৃদপিন্ড বিজ্ঞাপন । চেষ্টা করেছি হাবিব ভাইয়ের কথা রাখতে যতটুকু পেরেছি । দেখেছি স্থানীয় সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ কেউ জাতি সাংবাদিক হলেও অপরাপররা থেকে গেছেন নিজের পেশা নিয়ে । সাংবাদিকতাকে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়াতে পারেন নি । তারা সাংবাদিকতার লেবাস গায়ে মেখে তাদের সমাজে বিকশিত হতে । তারাই মূলত পৃথক একাধিক প্রেসক্লাব গঠন করে সমাজে সাংবাদিকদের বিতর্কিত করছেন । মফস্বলে সাংবাদিকদের মাঝে বিরোধ যতই থাক সংকটে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন