পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আমার সাংবাদিকতা


 মনোনেশ দাস : স্কুল জীবন থেকেই মুক্তাগাছা পাঠাগারে বই পত্র, পত্রিকা পড়ে আসছি। সেখান থেকেই সংবাদ সৃষ্টির বুদবুদ । অগনিত বই পড়েছি পাঠাগারে । আজো শেষ করার স্বপ্নে বিভোর থাকি। পাঠাগারের আজীবন সদস্য ।পরিচালক কমিটির অনেককেই চিনি না । বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম ভাই পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ডিজিটাল যুগের জ্ঞানের সীমা বদ্ধতায় পিছিয়ে গেলেন কিনা খবর রাখিনা। শ্বেত পাথরে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করেছেন ।

সংগঠনে আগ্রহী নই আমি। তবে, সংগঠকরা আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবের মাঠে সাংবাদিক এডভোকেট আলম ভাইয়ের সাথে ক্যান্টিন করেছিলাম। মরহুম আকম হাবিব, সিরাজুল হক সুরুজ , তপন দেবনাথ পাকা হাতের সাংবাদিক ছিল । আমি সবার সাথে মিলে মিশে থাকা মানুষ ।
ময়মনসিংহ শহরে মাঠ সাংবাদিকরা খুবই পারদর্শী। ছবি তোলেন ঢাকার সাংবাদিক স্টাইলে । এখানে নিজেকে সম্পৃক্ত করা কঠিন। বলতে গেলে দুঃসাধ্য। স্পেইছ নেই । উপজেলা থেকে জেলায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। তারপরও গন্ডি পেড়িয়ে অনেকেই হয়েছেন। জেলার গন্ডি নয় বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাড়াও বাইরে থেকে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এমন সংখ্যা কম নয় ।
দৈনিক জাহানের কাজী ইয়াসিন ভাই কলকাতার বাংলায় কথা বলেন । অনেকে নিজের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন। ময়মনসিংহ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তাগাছা ।
মুক্তাগাছার সাংবাদিকগণ জেলা, বিভাগে ভালো অবস্থান নিয়ে আছেন। বিটিভি, বাসস, বেতার মুক্তাগাছার দখলে। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব , বিভাগীয় প্রেসক্লাব এবং ময়মনসিংহ সদর প্রেসক্লাব আমরা মুক্তাগাছার সাংবাদিকরা নেতৃত্ব দিয়ে আসছি ।
সুখের পাশে দুঃখও থাকে। বহিরাগত অর্থাৎ অন্য জেলার লোকজন মুক্তাগাছার পদবী নিয়ে সাংবাদিকতা করছেন । দুঃখের কারণ নিজেদের বিরোধ । নিজেদের বললেও অত্যুক্তি হবে। ভিন্ন পেশার সাংবাদিক নামধারীদের জন্য হয়তোবা । ময়মনসিংহের এখন অনেক সাংবাদিকের ভীড় । অনেকে ভালো করছেন ।
ইন্টারনেটের যুগে চিন্তা করার অবকাশ নেই। নিউজ নিয়ে ভাবার সময় নেই। কার আগে কে নিউজ পাঠাবে প্রতিযোগিতা। এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেলে সোজা খাদে । যে কারনে এখানকার সাংবাদিকরা কমই অসুখে ভুগেন। কেউ খবর নেয় না নিজের বাড়িতে কি হচ্ছে। তিনি ব্যস্ত মানুষের খবর নিতে।
আমি পড়তে পছন্দ করি। বেশি পড়তে ভালো লাগে না। শিশুকাল থেকেই। হয়তো বাবা আমাকে আবিষ্কার করতে পারেন নি। আমি ভাল কিছু করছি না বুঝে নিজের ব্যবসায় বসাতে চেয়েছেন। আমার কাছে বাবার সব চাওয়ার স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছি । বাবার অশান্তি থেকে রক্ষায় একদিনে নিজেদের ব্যবসায়ীক ট্রাক চালাতে শিখে ফেলি।
এবার ট্রাক নিয়ে জেলায় জেলায় ঘুরেছি আর সাংবাদিকতার ঝুলিতে জমা করেছি । ইন্ডিয়ায় বেড়াতে গিয়েও সংবাদ খুঁজেছি। সাংবাদিকতায় আমার মত এমন দেখিনি রাত দিন ভাবনার একমাত্র উপকরণ নিউজ । যে নিউজ দেখবেন বিশ্ববাসী। ইন্টারনেট মুখে কেও গন্ডির ভেতর নন । এন্ড্রয়েড মোবাইল মানেই একেক জন নাগরিক সাংবাদিক।
কাগজের লেখা ডাকে পাঠানো কত খবর আর ছবি পত্রিকা অফিসে পড়ে আছে যা কল্পনাতে নেই। আমি একজনের ভালো লাগাকে গুরুত্ব দেই । আমি প্রকৃত সাংবাদিকে শ্রদ্ধা করি ভালবাসি । তার সাথে সাংবাদিকতার চর্চা করি । সংবাদ খোঁজার চেষ্টা করি । সেই সংবাদ যা পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়নি।
গুরুর সন্ধান পেয়েছিলাম । যা দিয়ে গেছেন তা নিয়ে পড়ে থাকার সুযোগ নেই। বিজ্ঞানের যুগ জ্ঞানের আলোয় ইন্টারনেট প্রযুক্তি। কম্পিউটারে লিখতে হবে। পাঠাতে হবে । আগামীতে আরো এগিয়ে যেতে হবে। মফস্বলে কোনো কোনো নামধারী সাংবাদিকের কারনে মূল ধারার সাংবাদিকদের কোনঠাসা হতে হয় । পাত্তা দিতে চান না। এসব যন্ত্রনার বোঝা বইতে হয় আমাদেরকে।
আমরা কোন ভিন্ন গ্রহের মানুষ নই । প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কারো ভাই ব্রাদার। ছেলে মেয়ে । মফস্বলে পত্রিকা অফিস ও সাংবাদিকতায় মেয়েরা আসছে। আসছে আমাদের প্রজন্ম। ওরা ভালো করছে । আমাদের মান মর্যাদা বাড়িয়ে তুলছে । আমিও চাই আমার সন্তানরা সাংবাদিকতা করুক । বাচ্চাদের প্রযুক্তি জ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছিনা । ওরা পারবে আমার বিশ্বাস।
মুক্তাগাছায় গ্রাম থিয়েটার করেছি । জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রফেসর ড . আমিনুল ইসলাম দুর্জয় ভাইয়ের মাধ্যমে প্রফেসর সেলিম আল দীন স্যারের কাছ থেকে স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতায়ণ পত্র পেয়েছি। মুক্তাগাছা তথা ময়মনসিংহবাসীর বড় পাওয়া আমরা স্যারকে পেয়েছি।
মফস্বলের সাংবাদিক হিসেবে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই আমাদের। জাতীয় কোন কর্মসূচিতে নেই আমরা । এসব অধিকার আমাদের অর্জন করতে হবে। সাংবাদিকতা করতে কি পরিমান টাকা খরচ করেছি হিসাব রাখিনি। অনেকেই আসেন এখানে অনেক টাকা ভেবে।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় বৃদ্ধা মায়ের সংবাদ প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত গড়িয়েছে। রওশন এরশাদের নির্দেশে সহপাঠী বাল্যবন্ধু তৎকালীন এমপি ,তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন মুক্তির অনুরোধে ফুলবাড়ীয়ার এমপি মোছলেম উদ্দিন উপজেলা পরিষদে সভা করেন । ইউএনও সভাপতিত্ব করেন। এমপি মুক্তি মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবের উন্নয়ন সহযোগীতা করেছেন ।
এখানকার সাংবাদিকরা সুন্সি ও ঠাকুর টাইপের। অনুষ্ঠানে খাবারের দিকে এখনো আমাকে পিড়া দেয় । মুক্তাগাছার এমপি জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মরহুম একেএম মোশাররফ হোসেন এফসিএ স্যারের প্রিয় মানুষ ছিলাম । সফরসঙ্গী করে রাখতেন। স্যার জানতেন আমি ভোজন রসিক মানুষ। ভালো খাবারটা আমাকে দিতে বলতেন। ডায়বেটিসের টার্গেটে পড়ে অসহায়। আজো আমি সাংবাদিকতায় প্রেমে অন্ধ হয়ে আছি ।
এখানে আজো গড়ে উঠেনি প্রয়াত সাংবাদিকদের লেখাগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা। সাংবাদিক সংগঠনগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছে । তাদের সেই চেষ্টাও সফল হতে পারে সহযোগীতা থাকলে। এখনকার সাংবাদিকদের ভালো মন্দ সকল ধরনের সোর্স আছে ।
ব্যক্তি হিসেবে বন্ধু থাকলেও পেশায় কোন বন্ধু নেই। পরিবার পরিজন আছে । তারা কিভাবে দেখেন আমাদের ? এমন প্রশ্ন চাওয়ার আগেই আমাদের নিয়ে বলতে থাকেন । মফস্বলে থেকেও আমারা দেশ রাষ্ট্র নিয়ে ভাবি । এখনকার মানুষরা এনিয়ে আলোচনা সমালোচনা করেন। এসব বিষয় নিয়ে লিখছেন থাকার সহযোদ্ধাগণ ।
এখানে আমার সহপাঠী বাল্যবন্ধুরা আছে । আমি স্থানীয় মানুষ। সাংবাদিকতার বাইরে আমার সমাজ আছে। প্রতিবেশী আছে । পরিবারের মতো তাদের সাথেও ভাব থাকতে হয় । আমাদের নির্দিষ্ট পোশাক নেই । ঢাকার সাংবাদিকদের মত প্রেস লেখা জামা- কাপড় গায়ে নেই ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন