photo

রবিবার, ৬ মার্চ, ২০২২

মুুক্তাগাছায় কমছে মহুয়া গাছ

 

মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহে ১৬৫০ সালে রচনা হয় মহুয়া পালা । দীনেশচন্দ্র সেন মহুয়া পালাকে ২৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত করেন। মৈনমনসিংহ গীতিকায় মহুয়া কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৩ ভাষায় মুদ্রিত হয় । এই মহুয়া গাছের নাম ধরেই মহুয়া পালার মহুয়ার সৃষ্ট বলে প্রবাদে আছে । 

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার লেখা ফুল, ফল ও গাছপালার মধ্যে মহুয়াকে বর্ণনায় এনেছেন । মহুলা, মধুকা, মোহা, মোভা, মহুভা নামেও পরিচিত দেশের বৃহত্তম বনাঞ্চল শালবন অঞ্চলে । বনের একাংশ মুক্তাগাছার রসুলপুর, কমলাপুর, বিজয়পুর, চন্ডিমন্ডপ এলাকায় মহুয়া এক সময় অগনিত মহুয়া গাছ ছিল। এখন খুব একটা দেখা মেলে না । 


লোককথায় আছে, শাল বনে ভল্লুকের দল মহুয়া গাছের গন্ধে উন্মত্ত হত। ক্ষীর বৃক্ষ মহুয়ার কাটা স্থানে সাদা দুধ নিঃসৃত হয়, কান্ড থেকে ছাল সংগ্রহ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা লালচে বাদামি রঙের আবির তৈরি করে ধর্মীয় পূজো আচারে ব্যবহার করেন। বৈজ্ঞানিক নাম: মধুকা ল্যাংফোলিয়া । শুষ্ক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান গাছগুলির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মহুয়া । সুপারির মত খেতে ফল ও অদ্ভুত নেশার  গন্ধ মাখা ফুলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি বিদ্যমান স্বাদে অম্লমধুর। বনের আদিবাসীদের একটি চমৎকার খাদ্যের উৎস ও দৈনন্দিন জীবনে নানা চাহিদা মেটায় বলে তাদের খুবই প্রিয় গাছ মহুয়া আর শাল। বন্যপ্রাণীদেরও ব্যাপক পছন্দ মহুয়া ফুলে। ফুলে পাখি, মৌমাছি , কীট পতঙ্গ পরাগায়ন করে । মহুয়া চরম শুষ্ক তাপ গ্রীষ্মে মোকাবেলা করতে সক্ষস।



আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রাচার্য মহুয়া গাছের বীজের তেল,ঠান্ডা ব্যথা উপসমে, চাল অর্শ রোগে, পাতা পুরনো ক্ষত, ঠান্ডা জনিত সমস্যাসহ বহু রোগে প্রয়োগের উপশমের উল্লেখ করেছেন ।

বিগত দশক ধরে বন বিভাগ সামাজিক বনায়নে আকাশমনি, ইউক্যালিপটাসসহ বিদেশী প্রজাতির গাছ রোপনের ফলে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ময়মনসিংহের ঐতিহ্যের সাথে মিশে থাকা মহুয়া গাছের সংখ্যা। মুক্তাগাছা হাজী কাশেম আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক মুজাহেদুল ইসলাম বিপুল বলেন, ছবির মহুয়া গাছটি অনাদরে দাড়িয়ে আছে মুক্তাগাছা আরকে হাই স্কুল খেলার মাঠ সংলগ্ন রাস্তার পাশে। গাছটির ফুল দেখতে অনেক সময় নিয়ে প্রতিবছর অপেক্ষা করি। নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিতির চেষ্টা করি। 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন