মনোনেশ দাস (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা
আগে যেখানে সকাল-সন্ধ্যা কাসার ঘন্টা, ঢাকের বাড়ি, করতালের ঝুনঝুন শব্দ শোনা যেত, এখন সেখানে শুধু চাম বাদুরের ডাক শোনা যায় । অযত্ন আর অবহেলায় প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ৮টি মন্দির। সোয়াশ"বছরের প্রাচীন পৌর শহরে ১৫টি মন্দির রয়েছে। বাষাটি ইউনিয়নের জগন্নাথবাড়িতে ১টি মন্দির। তন্মধ্যে ১৭শ" শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে ৭টি , বাকি ৯টি ১৮শ"এবং১৯শ" শতাব্দীতে নির্মাণ করা হয়। ১৭শ" শতাব্দীতে নির্মিত মন্দিরগুলো হচ্ছে জমিদার বাড়ির ভেতরের রাজেশ্বরী মন্দির, জমিদার বাড়ি সংলগ্ন ২টি শিব ও ৩টি শিবমন্দির (পাশাপাশি), লক্ষ্মীখোলার শিবমন্দির, কালিবাড়ির ১টি জোড়া শিবকালী মন্দির (পাশাপাশি) এবং জগন্নাথবাড়ি মন্দির। এই ৮টি মন্দিরের অবস্থা আজ বড়ই করুণ।
৪টি মন্দিরের যাবতীয় কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই। এগুলো বেদখল করে গৃহ হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে । বাকি ৪টি মন্দির বিলুপ্ত হবার পথে । এককালে হিন্দু জমিদার শাসিত অঞ্চল ছিল মুক্তাগাছা । ১৭০৪ সালে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চোধুরী নবাব মুর্শিদকুলি খার অনুগ্রহ লাভ করে মুক্তাগাছায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং জমিদারি শাসন চালু করেন । নির্মাণ করেন বাসভবন ও মন্দির । শ্রীকৃষ্ণ ও তার পরবর্তী বংশধররা পর্যায়ক্রমে ভারত থেকে দক্ষ শ্রমিক এনে এ সমস্ত মন্দির তৈরি করেন বলে লোকমুখে শোনা যায়। ১৯৫৬ সালে সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করলে জমিদারদের প্রায় সবাই ভারতে চলে যান । এরপর থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত লুটপাট হয় মন্দিরের বিগ্রহ, দামি সরঞ্জামাদি এবং জমিদার বাড়ির মালামাল । ১টি মন্দির কিছুদিন আগ পর্যন্ত জমিদারদের শেষ বংশধর দেবাশীষ আচার্য দেখাশোনা করতেন । তার মৃত্যুর পর এটিও নীরব । বাকি ৪টি মন্দির পরিচালনা ও সংরক্ষণ করছেন স্থ্ানীয় হিন্দুরা। তন্মধ্যে কালীবাড়ির কালী শিব (পাশাপাশি দুটি) মন্দিরের অবস্থা বড়ই করুণ। মন্দির দুটির দেয়ালে এখনো প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের কারুকাজ ফুটে আছে। মন্দিরের চারদিকে আগে কারুকাজ মন্ডিত দেয়াল ছিল । জগন্নাথ বাড়ির মন্দিরটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন