ময়মনসিংহে মাকাল। মনোনেশ দাস : মাকাল ফল নিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহে নানা ধরনের প্রবাদ আছে। এক সুন্দরী গৃহবধূ রাতের অন্ধকারে শাশুড়ীকে বিষ প্রয়োগে হত্যার ষড়যন্ত্র করে । কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ঐ বিষ তাকেও খেতে হয় । বিষক্রিয়ায় দু”জনই মারা যায় । মৃত্যুর আগে শাশুড়ী পুত্রবধূকে অভিশাপ দেয় । ঐ অভিশাপেই গৃহবধূ মাকাল ফলে পরিনত হয়। যার বাইরের রুপই সুন্দর কিন্তু ভেতরটা কালো। মাকাল গাছের শিকড় কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের ওষুধ তৈরীতে কাজে লাগে। কফ ও শ্বাস কষ্ঠ নিরামযে মাকাল ফলদায়ক। নাক ও কানের ক্ষত উপশমে মাকাল গাছ ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় । মাকাল ফলের বীচি ও আঁশ শুকিয়ে গুড়ো করে পানিতে দ্রবীভূত করে ফসলে প্রয়োগ করা যায়। এই দ্রবন ফসলের পোকামাকড়,ইঁদুর ও রোগ বালাই দমনে বিষ হিসেবে কাজ করে । আবহমান কাল ধরে বৃহত্তর ময়মনসিংহের কৃষকরা মাকালের বিষ দিয়ে ফসল রক্ষা করে আসছে। এর বিষ ফসলের জন্য ক্ষতিকর নয়। এক সময় কবিরাজ বৈদ্যরা মাকালের বিষের দ্রবণ তৈরী ও বিক্রি করতো । মাকাল ফল দেখতে ভাল ভেতর কালো , প্রবাদটির সাথে আমরা কমবেশী পরিচিত হলেও আসলে এটি একটি উপকারী ভেষজ এবং পরিবেশ বান্ধব বিষ। কম-বেশী সকলেই পরিচিত মাকাল উদ্ভিদটি গ্রাম গঞ্জের ঝোপ জঙ্গলে জন্মে থাকে। ৫প্রকার মাকাল ফল দেখতে পাওয়া যায়। একে আরবিতে হানজাল,সংস্কৃত দেব দালিকা এবং হিন্দিতে ইন্দ্রায়ন বলা হয় । এর বৈজ্ঞানিক নাম সিট রুলুস কোলো সিন্থিস। উদ্যানতত্ত্ববিদ উইলিয়াম মিথিউস মাকালকে অন্তসার শূন্য ফল বলে অভিহিত করেছেন। মাকাল মূলত: লতাজাতীয় উদ্ভিদ । চৈত্র বৈশাখে মাকাল গাছে সাদা ধবধবে ফুল ধরে । শ্রাবণ ভাদ্রে মাকাল ফল পরিপক্ক হয়। তখন ফল হয় মনকাড়া লাল টুকটুকে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, নানা কারণে প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ায় এটি হারিয়ে যাচ্ছে। দেশী-বিদেশী নানা ধরনের কীটনাশকের প্রভাবে পরিবেশ বান্ধব মাকালের বিষ আর কেউ কিনতে চায় না। বাজারেও পাওয়া যায় না ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন