
মনোনেশ দাস : ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় জমিদারবাড়ি পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন সস্ত্রীক শুক্রবার পরিদর্শনে আসেন। পরিদর্শদনকালে মুক্তাগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ আবু মো: ফজলুল করিম ছিলেন ।

জানা যায়, ময়মনসিংহে মুক্তাগাছায় জমিদারবাড়ি সংস্কার হওয়ায় সেখানে পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিষ্ণু সাগর দীঘি, প্রাচীন স্থাপনা যুগল মন্দির, চান খাঁর মসজিদ, বিবির ঘর, ঘূর্ণায়মান নাট্য মঞ্চ, সাত ঘাটের পুকুর, জলটং, রসুলপুর বন ঘুরে দেখে মুক্তাগাছার ঐতিহ্যবাহী খাবার মন্ডার স্বাদ নিয়ে ফিরে যান আগত পর্যটকরা।

জানা যায়, সতেরশ’ শতকের মাঝামাঝি নির্মাণ করা হয় মুক্তাগাছার জমিদার বাড়িটি। ১৮শ’ শতকের ভূমিকম্পে বাড়িটি ভেঙ্গে পড়লে লন্ডন আর ভারত থেকে সুদক্ষ কারিগর এনে ভূমিকম্প সহিষ্ণু করে পুনঃনির্মাণ করা হয়। ১৯৪৭ সালের পর মুক্তাগাছায় জমিদারি প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর ১৬ জন বংশধরের প্রায় সবাই চলে যান ভারতে। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে তাদের নির্মিত ১৬টি বাড়ি। ক্রমান্বয়ে বাড়িগুলোতে (রাজবাড়ি ব্যতীত) গড়ে তোলা হয় শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, নবারুণ বিদ্যানিকেতনসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জমিদারদের কয়েকটি বাড়ি এখনও দখল করে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। বর্তমান সরকার পর্যটনের অপার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতœতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জমিদারবাড়ি সংস্কারের কার্যক্রম হাতে নেয়। সংস্কারের ফলে ফিরে আসতে থাকে বাড়িটির আগের চেহারা। গত জুনে সংস্কার কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও আরো সময় প্রয়োজন বলে জানান সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার কাজের সময় বৃদ্ধি করে চালিয়ে যাচ্ছেন কাজ।
কথিত আছে, একসময় নিম্নাঞ্চল ছিল মুক্তাগাছা শহর। বিশাল দীঘি খনন করে শহর উঁচু করে জমিদারির গোড়াপত্তন করা হয়। এরপর দীর্ঘ আড়াইশ’ বছর ধরে বন্যামুক্ত মুক্তাগাছা। মুক্তাগাছায় জমিদারগণ এখানে অবস্থানকালে বহু স্থাপনা নির্মাণ করেন। রোপণ করেন দুর্লভ প্রজাতির গাছপালা। এখন জমিদার না থাকলেও রয়ে গেছে তাদের নির্মিত বহু মূল্যবান স্থাপনা।
ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছার রসুলপুর বনে শাল-গজারি গাছ আর লাল মাটিতে আনারস বাগান দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। শোনা যায়, জমিদারদের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পেতে এই বনে একসময় গড়ে ওঠে বিদ্রোহী ফকির সন্ন্যাসী বাহিনী। সুরম্য স্থাপনা পরিদর্শন শেষে দেশখ্যাত মন্ডার স্বাদ পর্যটকদের ক্লান্তিদূর করে। আজ থেকে ২শ’ বছর আগে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে গোপাল পাল এই মন্ডা তৈরি করেন। মন্ডা বিক্রেতা গোপাল পালের বংশধররা জানান, এবছর পর্যটকের সংখ্যা বেশি তাই মন্ডা বিক্রি বেড়েছে। জমিদার বাড়ি সংস্কারের ফলে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ছবি- মো: কামাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন