মনোনেশ দাস, ময়মনসিংহে বাংলাদেশে বনাঞ্চলে দেখা মিলতো তিতির পাখির । বিলুপ্ত হওয়ায় বন্যপ্রাণী আইনে এখন সংরক্ষিত । সেই তিতির এখন গৃহস্থের বাড়িতে । তিতির পালন করে লাভের স্বপ্ন বুনেছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজার সংলগ্ন বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল ।জান পাখি ফার্ম নামের খামারে এখন তার কয়েকশ’ তিতির । আর মাত্র এক মাস পরই এই তিতিরগুলি ডিম পাড়বে । তার সংগৃহিত প্রতিটি ৬শ’টা মূল্যের বাচ্চা তিমির এখন ২ হাজার টাকা দামে বিক্রি করছেন । জানান ইব্রাহিম খলিল।
আমরা যাকে চায়না মুরগি হিসাবে চিনি তারাই মূলত তিতির । আফ্রিকার এই পাখিটি ব্রিটিশ আমলে ইংরেজদের হাত ধরে তাদের শাসনামলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করে প্রবল রোগপ্রতিরোধ সম্পন্ন এ পাখি। সংক্রামক বা পরজীবীঘটিত রোগ কোনটাই সহজে আক্রান্ত করতে পারেনা। মাইকোটক্সিন ও আফলাটক্সিনের প্রতি অধিক সহনশীল। এদের খাদ্য খরচ তুলনামূলকভাবে কম। একটি পূর্ণবয়স্ক তিতির দৈনিক ১১৮-১২০ গ্রাম খাবার খায়। কচি ঘাস, পোকামাকড়, সবজি এদের প্রিয় খাবার । গ্রামে সহজেই পাওয়া যায় এসব খাবার । সম্পূরক খাদ্যের পরিমান কম লাগে। এদের জন্য ভাল মানের ঘর লাগে না এবং খুব বেশী সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় না। প্রতিকূল পরিবেশের সাথে এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
এটি লালন-পালনকারীরা জানান, দেশি মুরগির চেয়ে লাভজনক তিতির পালন । তাছাড়া হচ্ছে বিলুপ্তপ্রায় এর সংরক্ষণও ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষক ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস জানান , গত ৩ দশক আগেও গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির সাথে তিতিরদের চলাফেরা করতে দেখা যেত। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা উধাও হয়ে যায়। সংখ্যায় স্বল্প এ পাখিদের দেখা মেলে খাচায় বন্দি অবস্থায়।
২০১০ সাল থেকে বাকৃবির পোল্ট্রি খামারে তিতির পাখি পালন, পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা শুরু হয় ।বাচ্চা উৎপাদন ও তা পালনের সকল ধাপে চলে ৭ বছর ধরে গবেষণা।
সারাদেশে এই পাখি ছড়িয়ে দিতে বিনামূল্যে অনেককেই তিনি এই পাখি বিতরণ করা হয় ।
সেখান থেকে এই তিতির সংগ্রহ করেন ইব্রাহিম । তিনি জানান, দেশি মুরগি যেখানে ৬ মাসে সর্বোচ্চ ১ কেজি ওজনের হয় সেখানে তিতির পাখি দেড় কেজি বা তার বেশি । আবার একটি দেশি মুরগি বছরে ৫০/৬০ টা ডিম দেয় যেখানে একটি তিতির পাখি বছরে প্রায় ১০০-১২০টি ডিম দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন , বাংলাদেশে গ্রামীণ পরিবেশে দেশী হাঁস মুরগীর সাথে তিতির পাখি পালনের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক তিতির পালন করে দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এর ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে পড়বে একটি ইতিবাচক প্রভাব ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন